এইদিন ওয়েবডেস্ক,প্যারিস,০৩ জুলাই : ফ্রান্স দাঙ্গায় নতুন মোড় দেখা দিয়েছে । দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে দেশ বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছে ফরাসির বাসিন্দারা । রবিবার রাতে ফ্রান্সের দাঙ্গা কবলিত লিয়নের (Lyon) রাস্তায় মিছিল করতে দেখা যায় বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের । তারা শ্লোগান দেয়,’নীল, সাদা, লাল, ফ্রান্স হল ফরাসিদের !’ পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের মুসলিম কিশোর নাহেল মারজাউকের (Nahel Merzouk)মৃত্যুর পর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হিংসার আগুনে জ্বলছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সহ একাধিক শহর । এযাবৎ ৪ টি থানায় হামলা চালানো হয়েছে । আহত হয়েছে ৭৯ জন পুলিশ কর্মীসহ মোট ২৫৬০ জন । একজন দমকলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে । বিভিন্ন প্রান্তে ১৩৬০ টি গাড়ি,২৩৪ টি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি চলছে দেদার লুটপাট । ৩,০০০ জনের অধিক দাঙ্গাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে । দাঙ্গা কবলিত এলাকায় ৪৫,০০০ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে ।
এদিকে প্যারিসের একটি শহরতলির মেয়র রবিবার বলেছেন যে বিক্ষোভকারীরা তার বাড়িতে একটি গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিল এবং তারপরে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, সেই সময় তার স্ত্রী এবং তার এক সন্তানকে আহত করেছে দাঙ্গাকারীরা । রাজধানীর দক্ষিণে একটি শহর হে-লেস-রোজেস (Hay-les-Roses)-এর মেয়র ভিনসেন্ট জিনব্রুন টুইটারে এক বিবৃতিতে বলেছেন,’গত রাতে,একটি পৃথক আক্রমণে ভয়ঙ্করতার মাইলফলক ছুঁয়েছে ।’
জিনব্রুন বলেছেন যে তিনি টাউন হলে রাত্রি যাপন করছেন, যেমনটি তিনি আগের তিন রাত ছিলেন, যখন একটি গাড়ি তার বাড়িতে রাত্রি প্রায় দেড়টা নাগাদ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তখন আমার স্ত্রী-সন্তান ভেতরে ঘুমাচ্ছিল ।’ তারা পালানোর চেষ্টা করায় করার সময় স্ত্রী ও তার এক সন্তান আহত হয়েছে বলে তিনি জানান ।
পুলিশ টুইটারে বলেছে যে দাঙ্গাকারীরা প্যারিসের দক্ষিণ-পশ্চিমে ট্যুরস শহরের কাছে লা রিচে শহরে অন্য মেয়রের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । হে-লেস-রোজেসের কাছাকাছি একটি শহর ক্রেটিলের পাবলিক প্রসিকিউটর স্টিফেন হার্ডউইন বলেছেন যে তার বাড়িতে হামলার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে গাড়িটির সাহায্যে বিল্ডিংটিতে আগুন লাগানোর উদ্দেশ্যে ছিল । তিনি উল্লেখ করেছেন যে একটি বোতলে কিছু দাহ্য তরল পাওয়া গেছে । তিনি বলেন,’বাড়ির বারান্দায় পৌঁছানোর আগে একটি ছোট প্রাচীরে ধাক্কা লেগে গাড়িটি থেমে যায় । কেবলমাত্র সামনের গেট এবং পরিবারের গাড়িটির জন্য ওই গাড়িটি আর এগুতে পারেনি । গোলমাল শুনে এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখে তার স্ত্রী এবং তার ৫ ও ৭ বছরের দুই সন্তান পিছনের বাগানের মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন,তখন তার স্ত্রী আহত হন ।’
ফরাসি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন, এই হামলাকে “কাপুরুষোচিত এবং ভয়ানক” বলে অভিহিত করেছেন এবং টুইটারে একটি পোস্টে বলেছেন যে হত্যার চেষ্টার মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত চলছে । এই ঘটনাগুলির জন্য অপরাধীদের তাদের জঘন্য কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে ।’
ফ্রান্সের বাকি অংশ জুড়ে, শনিবার সন্ধ্যাটি সাধারণত সাম্প্রতিক রাতের তুলনায় শান্ত ছিল । কিন্তু তারপরও, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেইতে দাঙ্গা, লুটপাট ও সংঘর্ষে জড়িত থাকার জন্য আরও শতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে । মৃত কিশোর নাহেল মারজাউকের আগের দিন শেষকৃত্যের পরে রবিবার উত্তেজনা বেশি ছিল। আলজেরিয়ান এবং মরক্কোর বংশোদ্ভূত এই কিশোর মঙ্গলবার প্যারিসের শহরতলির নান্টেরেতে একটি ট্রাফিক চেকিং চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় । মুসলিম অভিবাসীরা এটিকে জাতিগত বৈষম্য হিসাবে দেখছে । মারজাউকের ঠাকুমা নাদিয়া রবিবার ফরাসি নিউজ চ্যানেল বিএফএমটিভি (BFMTV) এর সাথে কথা বলেছেন এবং দাঙ্গাকারীদের সরে যেতে বলেছেন । তিনি বলেন, ‘যারা ভাঙচুর করছেন,আমি তাদের বলি,এবার থামুন । তাদের দোকানের জানালা ভাঙা বা স্কুল ও বাসকে টার্গেট করা থেকে বিরত থাকতে হবে । সকল মায়েরাই যারা বাসে যায় ।’।