দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৫ জানুয়ারী : স্বামী রোগগ্রস্থ । নিজেরও দুটি পা অকেজো । ওই অবস্থাতেই চার বছরের মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে তিনজনের সংসার চালানোর গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয় বছর সাতাশের প্রতিবন্ধী গৃহবধুকে । ট্রাই সাইকেলে চড়ে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে যেটুকু উপার্জন হয় তাতেই কোনো রকমে পরিবারটির অন্ন সংস্থান হয় । এদিকে বধূকে শহরের রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখে তাঁর জীবন সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর বাজারের বাসিন্দা সমাজসেবী যুবক শেখ আমিরের । তিনি কাছে গিয়ে এনিয়ে প্রশ্ন করলে নিজের পরিবারের অসহায় অবস্থার কথা খুলে বলেন বধূ । ওইদিন মহিলাকে অল্প কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিলেন ওই মুসলিম যুবক । তবে ফেরার আগে বধূকে আশ্বাস দিয়েছিলে ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন তিনি । কথামত আজ বুধবার নিজের শিশুকন্যা তানিশা পারভিনকে সঙ্গে নিয়ে ওই অসহায় বধূর সঙ্গে ফের দেখা করেন আমির । তবে তিনি খালি হাতে জাননি আজ । দুঃস্থ পরিবারটির জন্য বেশ কিছু নতুন পোশাক কিনে তুলে দিয়ে এসেছেন ওই অসহায় মহিলার হাতে । সরস্বতী পূজোর মুখেই এক মুসলিন যুবকের এই প্রকার মানবিকতা দেখে আপ্লুত হয়ে যান মায়া পাল নামে ওই মহিলা । অশ্রুসজল চোখে বারবার তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি ।
জানা গেছে,বর্ধমান শহরের উদয়পল্লী এলাকায় বসবাস মায়া পালের । স্বামী সঞ্জিত পাল আর চার বছরের শিশুকন্যা সঙ্গীতাকে নিয়ে তাঁর সংসার । সঞ্জিতবাবু অসুস্থ । অর্থাভাবে চিকিৎসা হয়না তাঁর । অসুস্থতার কারণে কোনো কাজকর্মও করতে পারেন না সঞ্জিতবাবু । ফলে সংসার চালানোর গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মায়াদেবী ।
মায়াদেবী বলেন,’আমার যখন সাত বছর বয়স তখন কোনো কারণে আমার দু’পায়ের জোর কমতে শুরু করে । আমার বাবা-মা অভাবি । তাঁদের সামর্থ্য মত যেটুকু পেরেছেন আমার চিকিৎসা করিয়েছিলেন । কিন্তু পরে অর্থাভাবে আর চিকিৎসা হয়নি । ফলে ধীরে ধীরে আমার দু’পা অকেজো হয়ে যায় । ওই অবস্থাতেই ৮-৯ বছর আগে উদয়পল্লীতে আমার বিয়ে দিয়ে দেন আমার বাবা-মা । বিয়ের পর প্রথম দিকে আমার স্বামীই শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন । কিন্তু হঠাৎ রোগে পড়ে যান তিনি । পরিবারের অভাবের কারনে ঠিকমত চিকিৎসাও করানো সম্ভব হয়নি । এখন তিনি কাজকর্ম করতে পারেন না । আমিই ভিক্ষা করে সংসার চালাই ।’
দেখুন ভিডিও :-
জানা গেছে,গত রবিবার নিজের কাজে বর্ধমান শহরে গিয়েছিলেন শেখ আমির । তখন শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাই সাইকেলে বসে পথচারীদের ভিক্ষা চাইছিলেন মায়া পাল । আমির বলেন,’ওই মহিলার থেকে কিছুটা দূরেই আমি দাঁড়িয়েছিলাম । দেখি মহিলাকে কেউ ভিক্ষা দিচ্ছে না । এটা দেখে খুব খারাপ লাগে আমার । তখন আমি ওই মহিলার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করাতে তাঁর অসহায় অবস্থার কথা জানতে পারি । তখনকার মত কিছু অর্থ সাহায্য করি তাঁকে । কথা দিই ফের আসবো । তারপর মহিলার কাছ থেকে একটা ফোন নম্বর নিয়ে আমি চলে আসি । এদিন ফোন করে মহিলার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে কিছু পোশাক কিনে দিয়ে এসেছি ।’
জানা গেছে,এদিন সকালে মেয়ে তানিশা পারভিনকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান শহরে গিয়েছিলেন আমির । শহরের দোকান থেকে মহিলার জন্য চাদর,পোশাক, মহিলার মেয়ের পোশাক ও তাঁর স্বামীর জন্য একটি টি-শার্ট কেনেন আমির । তারপর সেই সমস্ত পোশাক ওই প্রতিবন্ধী মহিলার হাতে তুলে দিয়ে আসেন তিনি । আমির বলেন,’আমি ছোট ব্যবসায়ী । আমার সীমিত সামর্থ্য । তাই আমার প্রতিবেশী শেখ আজহার আলিকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম । তিনি আমাকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন । সেই সঙ্গে আমার মেয়ের কিছু জমানো টাকা টাকা ছিল । তা দিয়েই ওই সমস্ত পোশাক কিনেছি ।’ বর্ধমান শহরের উদয়পল্লীর বাসিন্দা ওই দুঃস্থ পরিবারটি যাতে সরকারি সাহায্য পায় তার ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন আমির ও আজহার আলিরা ।।