প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ এপ্রিল : বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার জন্য আদিবাসী মহিলাদের দণ্ডী কাটা নিয়ে সম্প্রতি তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল রাজ্যজুড়ে।সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেল এক মুসলিম পরিবার।এমনই ঘটনায় মঙ্গলবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে শহর বর্ধমানে জেলাশাসকের অফিসের সামনে খবর পেয়ে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ঘটনাস্থলে পৌছে জিবান শেখের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করেন। তাতে অবশ্য চিড়ে ভেজে নি।জিবান শেখের পরিবার জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলার সঙ্গে দেখা করে তাদের উপর হওয়া অত্যাচারে ঘটনার সবিস্তার জানিয়ে তবে ক্ষান্ত হন।
অত্যাচারিত জিবান শেখের পরিবারের বসবাস
পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার হেতমপুর গ্রামে।তাঁরা দুই ভাই জিবান এবং বাজান। এদিন প্রবল গরমে উত্তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিলেন এই দুইভাই। তাদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। সঙ্গে আম্বেদকরের ছবি তাদের বোন মমতাজ এবং ৮৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা কোহিনূর বিবি।ছেলেদের পাশেপাশে হেঁটে যেতেও বৃদ্ধার কষ্ট হচ্ছিল । তাঁদের বুকে ছিল দাবির প্লাকার্ড।সঙ্গে জিবানের পরিবারের এমন প্রতিবাদ দেখে এদিন বর্ধমান শহরের মানুষজন বিস্মিত হয়েযান ।গড়াগড়ি দিতে দিতেই তারা পৌঁছান জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে। সেখানে সপরিবার ধরণায় বসেন।তাঁরা জানান,কোন বিহিত প্রশাসন না করলে আগামীকালই রাজভবনে যাবেন। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জমা দিতে।
শেখ পরিবারের সদস্যরা বলেন,আমাদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা শুনলে যে কোন লোকের চোখ কপালে উঠবে। তার দাবি; তারা পুরনো কংগ্রেসী পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস করে আসছেন। বাম আমলেও সরকারের বিরোধিতা করেছেন। এখন তারা তাদের ছোট বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে পড়েছেন সমস্যায়। যেখানেই যোগাযোগ হোক সমন্ধ ভেঙে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ ; খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় নিদানে এই পরিবারে মেয়ের বিয়ে হবে না।এছাড়াও তারা যখন নিজেদের জমি বিক্রি করে বোনের বিয়ের চেষ্টা করছেন তাতেও রেকর্ডে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এই পরিবার কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে গিয়েও বাঁধা পাচ্ছেন।
পরিবার সদস্যদের কথায়,তাঁরা মেমারির পূর্বতন বিধায়ক নার্গিস বেগম ও বর্তমান বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যকে সব জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি বিডিওর কাছে বিহিত চাইতে গেলে তিনিও আবার ব্লক সভাপতির কাছে যেতে বলেন। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো উত্তর পাননি।পরিবারের আক্ষেপ,কন্যাশ্রী-রূপশ্রী প্রকল্প রাজ্যে চলছে ।তাহলে কংগ্রেসকে সমর্থনের কারণে তাঁদের পরিবারের একটি মেয়ে বিয়ের জন্য এইসব প্রকল্পের সুবিধা পাবে না ! জিবানের প্রশ্ন, তাঁরা কি বাংলার সন্ধান নন। মুখ্যমন্ত্রীর সন্তান নন। পাশাপাশি তারা এও জানান; সি পি এমের আমলে তাদের বিরোধিতা করলেও তারা কখনো এইরকম আচরণ করেননি।
এই ঘটনা নিয়ে বিস্ফোরক জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার। তার কথায়,এই মধ্যযুগীয় ব্যাপার মেনে নেওয়া যায়না। এই অসহায়তার বিহিত প্রশাসনকে করতে হবে। তারাও দলের পক্ষ থেকে ঐ গ্রামে যাবেন। তারাও দেখতে চান ; কে কতবড় নেতা আছেন এই অন্যায় চালিয়ে যাবেন।অন্যদিকে খানিকটা ডিফেন্সিভ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তার কথায়; এটা হয়ে থাকলে খুব অন্যায় হয়েছে। তারাও এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারাও চান এর বিহিত হোক। কিন্তু একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে দলের সাথে জড়িয়ে দিয়ে ঐ পরিবারটি ঠিক কাজ করেন নি। এটা সম্ভবত কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা বলে দাবি প্রসেনজিৎ দাসের।
এদিন শেষ পর্যন্ত জেলাশাসকের সাথে দেখা হয়েছে পরিবারটির। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন তাদের।জেলা শাসক প্রিয়াংকা সিংলা বলেন, আমি তাদের বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা শাসকের কাছে পাঠিয়েছি।মহকুমাশাসক পরিবারে বিষয়টি দেখছেন।
জিবান শেখের পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের মেয়ের বিয়ে আটকে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। জায়গা বিক্রি করতে দিচ্ছেন না। হিমঘরে আলু রাখতে বাধা দিচ্ছেন।এইসব দাবি নিয়ে তারা যখন বসেছিলেন সেই সময় অন্য কাজে জেলাশাসকের দপ্তরে আসেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি তাদের কাছে নানা কথা জানতে চান। বিডিও র কাছে গিয়েছিলেন কী না জানতে চাইলে জিবান শেখ মন্ত্রীকে বেশ কিছু কাগজ দেখান। পরে মন্ত্রী বলেন: তাদের নাকি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছিল। কে কেড়ে নিয়েছে। মন্ত্রী অভিযোগ করেন খবর হবার জন্য তারা এভাবে বসে আছেন। তারা কেন দিদির দূতের কাছে বলেননি? তিনি আরোও অভিযোগ করেন খবর করার জন্য সংবাদমাধ্যম তাদের ওখানে বসিয়েছে। তিনি জানান; তিনি জেলাশাসকের সাথে ওই পরিবারের বিষয়ে কথা বলবেন।।