শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি,০৬ আগস্ট : নিজের মা’কে
দরজায় লাগানোর হুড়কো দিয়ে নৃসংসভাবে পিটিয়ে খুন করল মানসিকভাবে অসুস্থ ছেলে । শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি-২ ব্লকের সাতগেছিয়া-১ অঞ্চলের ভারখান্ডা গ্রামে । খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ গিয়ে মহিলার মৃতদেহটি উদ্ধার করে আনে । পুলিশ জানিয়েছে,মৃতার নাম রূপালি প্রামানিক (৪৮) । শনিবার মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় । এই ঘটনায় মৃতার ছেলে রাজীব প্রামানিককে(২৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
জানা গেছে,সাতগেছিয়া-১ অঞ্চলের ভারখান্ডা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন প্রামানিক ও রূপালিদেবীর একমাত্র সন্তান রাজীব । স্বপনবাবু সাতগেছিয়া পঞ্চপল্লী সমবায়ে কর্মরত । স্বপনবাবু বলেন, ‘অনেক ছোট থেকেই মানসিক সমস্যা রয়েছে আমার ছেলের । বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু রোগ সারেনি । ভেবেছিলাম বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে । তাই বছর চারেক আগে পাশের ধান্যখেড়ুল গ্রামের মেয়ে লাবনীর সঙ্গে ছেলের বিয়েও দিয়েছিলাম । বিয়ের পর স্থানীয় বাজারে গুঁড়ো চায়ের একটা দোকানও করে দিয়েছিলাম তাকে । একটা নাতনিও হয় । কিন্তু ছেলের মানসিক সমস্যা দূর হয়নি ।’
জানা গেছে,রাজীব ও লাবনীর মেয়ে কোয়েলের বর্তমানে বয়স প্রায় আড়াই বছর । স্বামীর মানসিক সমস্যার কারনে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়ের জন্মের অব্যবহিত পরেই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান লাবনীদেবী । তখন থেকেই তিনি বাপের বাড়িতেই রয়েছেন । এদিকে স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার পর থেকেই রাজীবের মানসিক সমস্যা আরো বেড়ে যায় । তার উপর কয়েকদিন ধরে সে ওষুধ খাচ্ছিল না বলে । ফলে সে বদ্ধ উন্মাদের মত আচরণ করছিল বলে জানিয়েছেন আত্মীয়রা ।
পরিবার সুত্রে খবর,শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের অফিসে ছিলেন স্বপনবাবু । বাড়িতে ছিলেন তাঁর বৃদ্ধ বিধবা মা বীনাপানীদেবী,স্ত্রী ও ছেলে । শুক্রবার সন্ধ্যা প্রায় সাতটার দিকে ঘটনাটি ঘটে । স্বপনবাবুর দু’তলা পাকা বাড়ির উপর তলায় নিজের ঘরে ছিল রাজীব । নিচের তলার একটি ঘরে শুয়েছিলেন বীনাপানীদেবী । প্রতিদিনের মত মুড়ির থালা হাতে নিয়ে উপরে টিভি দেখতে গিয়েছিলেন রূপালিদেবী । এদিকে তখন ঘরের সমস্ত লাইট অফ করে রেখেছিল রাজীব । আর রূপালীদেবী উপরে যেতেই রাজীব ঘরের দরজা লাগানোর একটা হুড়কো দিয়ে মায়ের মাথায় সজোর আঘাত করে । তারপর সে নিচে এসে তার ঠাকুমাকে বলে, ‘তোর বউকে মেরে দিয়েছি’ ।
জানা গেছে,খুনি নাতির মুখে এই কথা শোনার পর লোকজন ডাকাডাকি করেন ওই বৃদ্ধা । কিন্তু রাজীন একটি কাটারি নিয়ে বাড়ির সদর দরজায় বসে থাকায় কেউ বাড়ি ঢোকার সাহস পায়নি । শেষে খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ গিয়ে রূপালি প্রামানিককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকের ছায়া এলাকায় ।।