এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,০৪ জানুয়ারী : চেক জামা,চেক লুঙ্গি ও ডান হাতে ঘড়ি পরিহিত ব্যক্তির বাম দিকে বসে একটি বানর । ডান দিকে রাখা কালো রঙের একটি ব্যাগ । ব্যাগের মধ্যে একাধিক প্লাস্টিকের কৌটো ও বোতল রাখা । ব্যক্তির সামনে হাঁটু মুড়ে বসে জনৈক এক মহিলা । মহিলা তাঁর বাম হাতটি পেতে রেখেছেন ওই ব্যক্তি ও বাঁদরের সামনে । ব্যক্তির ডান হাতের কঞ্চির টুকরোটা মহিলার বাম হাতের তালুতে লাগানো । তাঁর ডান হাতটি ধরা আছে বানরের গলাবন্ধে । আশপাশে তখন শিশু থেকে বৃদ্ধ সমস্ত বয়সের মানুষ তাঁদের ঘিরে আছে । কোনও কোনও ব্যক্তি বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে গভীর মনযোগ সহকারে এই চিকিৎসা পদ্ধতি দেখে যাচ্ছেন ।
এদিকে লুঙ্গি পড়া ব্যক্তির নির্দেশ পেয়ে বাঁদরটি তার বাম হাত দিয়ে মহিলার পেতে রাখা হাতের দুটো আঙুল ধরে আছে । সেই সঙ্গে সে মহিলার হাতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কি যেন পর্যবেক্ষণ করছে । লুঙ্গি পরা ব্যক্তি বাঁদরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘ভালো করে দেখতে হবে । বিশ্বাস করে দেখাচ্ছে, বিশ্বাসের কথা বলতে হবে । এই গ্রামে নতুন এসেছি ।’ তিনি বলেন, ‘এই দেশে আমার বাড়ি নয় । আমার বাড়ি নদীয়া জেলায় ।’ বাঁদরের হাত দেখা শেষ হলে তখন লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তি তখন বলে ওঠেন, ‘বুড়িমার(মহিলার) কোথায় কোথায় রোগ দেখলি ?’ প্রভুর নির্দেশ পেতেই বাঁদর তখন মালিকের ডান হাতের তর্জনী টেনে নিজের বুকে, মাথা ও কোমড়ে ইশারা করে । তারপর সামনে বসা মহিলাকে বাঁদরের মালিক জিজ্ঞাসা করেন, ‘বুঝতে পারছ ?’ মহিলা ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানান ।
শুধু রোগ নির্ণয়ই নয়,পবনপুত্রর সহায়তায় চিকিৎসাও করে দিচ্ছেন ওই ব্যক্তি । নদীয়ার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হাত থেকে কোমড় ব্যাথা করে তো ? ব্যাবহার করা যাবে । চান (স্নান) করার সময় আমরা যেমন গায়ে তেলমাখি সেই ভাবে এই তেলটা মাখবে । এখানে হিন্দু- মুসলমানের কোনও ব্যাপার নয়,কেবল তেলটা পায়ে লাগিও না । কারন এটা হল পবিত্র জিনিস তো ।’ তিনি নাগাড়ে বলে চলেন, ‘রামভক্ত, সীতামায়ের আশীর্বাদে একটা ভালো হয়ে গেলে আরও ৫ টা রোগী পাবো । তারপর রাস্তাঘাটে দেখা হলে আমাকে ভাই-কাকা বা মামা বলে সম্বোধন করে এগিয়ে আসবে ।’
এরপর একটি বোতলের ছিপি খুলে মহিলার মাথায় তরল ঢেলে বাঁদরকে নির্দেশ দেয়, ‘তেলটা ফুঁকে দাও,জিভ দিয়ে চেটে দাও বুড়িমাকে ।’ প্রভুর নির্দেশ পেয়ে বাঁদর সামনে বসে থাকা মহিলার মাথায় বার কয়েক চেটে দেয় । তারপর মালিক ‘হয়ে গেছে’ বলতেই মহিলাকে চাটা বন্ধ করে মালিকের কাছে সরে আসে রামভক্ত হনুমান । আশীর্বাদ পর্ব শেষ হলে হনুমানের মালিক সামনে বসা মহিলাকে বলেন,’আনন্দ করে চলে যাও । মনে খুঁতমুত করলে হবে না । তাহলে আরও ক্ষতি হতে পারে ।’ চিকিৎসা পর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটি কৌটো থেকে মন্ত্রপূত মাদুলি বের করে মহিলার হাতে দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ধারন করার নির্দেশ দেন হনুমানের মালিক ।
বাঁদরকে সঙ্গে নিয়ে এহেন অভিনব রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি দেখা গেল বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের জয়নগর গ্রামের তফসিলি জাতিভুক্ত একটি পাড়ায় । বাঁদর ডাক্তারের ভিজিটও কম নয় । যেমন রোগ তেমন ভিজিট নিচ্ছেন বাঁদরের মালিক । ২১ থেকে শুরু । রোগ বিশেষে ১০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন এমন অদ্ভুত চিকিৎসার জন্য । জিজ্ঞাসা করাতে ওই ব্যক্তি জানান তাঁর নাম সাগর । বাড়ি নদীয়া জেলার চাপড়া থানার নবাবগঞ্জে।
এদিকে এই প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির কথা শোনার পর ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৌম্য সেনগুপ্ত ওই ব্যক্তিকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা,গলা ব্যাথা আমাদের সবারই হয় । আমরা যদি একটু যুক্তি দিয়ে বিষয়টি ভাবি তাহলে বুঝতে পারবো ওই ব্যক্তি চিকিৎসার নামে আসলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন । উনি একজন প্রতারক । প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা । এবং Drugs and Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act, ১৯৫৪-এর আওতায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিক প্রশাসন ।’ সেই সঙ্গে তিনি মানুষকে যুক্তিবাদী হওয়া ও বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাভাবনা করারও পরামর্শ দিয়েছেন ।।