এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৭ সেপ্টেম্বর : গতকাল মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির সিরিজের জাভারি মন্দিরের খন্ডিত বিষ্ণু মূর্তি সংস্কারের দাবিতে একটি মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে । প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় । সেই সময় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই । তিনি আবেদনকারীকে বলেন,”যান দেবতাকে এখনই কিছু করতে বলুন। আপনি বলছেন যে আপনি ভগবান বিষ্ণুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। তাই এখনই প্রার্থনা করুন ।”
প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের( Bhushan Ramkrishna Gavai ) এই মন্তব্যের পর দেশ জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । সোশ্যাল মিডিয়ায় বিআর গাভাইয়ের ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠছে । আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আইনজীবী বিনীত জিন্দাল একটা চিঠি লিখে বিআর গাভাইকে তার মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি বিষয়টি রাষ্ট্রপতির নজরেও এনেছেন৷ চিঠিটি এক্স-এ শেয়ার করে বিনীত জিন্দাল লিখেছেন,’সনাতন ধর্মের অনুসারী হিসেবে, আমি ভারতের মাননীয় প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাইকে একটি চিঠি লিখে ভগবান বিষ্ণু এবং হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে তাঁর আপত্তিকর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। এই চিঠির একটি অনুলিপি ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের কাছেও পাঠানো হয়েছে যাতে এই বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে তোলা হয়। আমি আশা করি সুপ্রিম কোর্ট এবং মাননীয় রাষ্ট্রপতি এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেবেন এবং ভারতের প্রতিটি ধর্মের মর্যাদা বজায় রাখবেন।’
তিনি চিঠিতে লিখেছেন,’শ্রদ্ধেয় মাননীয় প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই, আমি, বিনীত জিন্দাল, সনাতন ধর্মের আইনজীবী এবং অনুসারী, ভারতের একজন নিবেদিতপ্রাণ নাগরিক এবং ভগবান বিষ্ণুর অনুসারী, অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সাথে, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য খাজুরাহো মন্দির কমপ্লেক্সের অংশ, ঐতিহাসিক জাভারি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর জীর্ণ মূর্তি পুনর্নির্মাণ এবং পুনঃস্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে একটি আবেদনের শুনানিকালে করা গভীরভাবে আঘাতমূলক মন্তব্যগুলি এই মাননীয় আদালতের সদয় দৃষ্টিতে আনতে চাই।
বিনীতভাবে বলা হচ্ছে যে, যদিও মাননীয় আদালতের কোনও আবেদন গ্রহণ না করার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে, তবুও তাদের বিচক্ষণতা প্রয়োগ করতে হবে এমনভাবে যাতে কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে এবং আমাদের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন না হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক নামী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায় এই মন্তব্যগুলি ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হতে দেখেছি, যা লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তদের মনে প্রচণ্ড আঘাত ও যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে। “যাও এবং দেবতাকে কিছু করতে বলো” এবং “তাই এখনই প্রার্থনা করো” এই পরামর্শটি ছিল অত্যন্ত অনুপযুক্ত, সংবেদনশীল এবং অসংখ্য অনুসারীর বিশ্বাসের প্রতি অসম্মানজনক।’
উল্লেখ্য,মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দির সিরিজের জাভারি মন্দিরে মুঘল আমলের ভগবান বিষ্ণুর ৭ ফুট লম্বা মূর্তির মাথা কেটে দেওয়া হয় । জরাজীর্ণ বিষ্ণু মূর্তি পুনর্নির্মাণের নির্দেশনা চেয়ে করা একটি আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে । এওআর সঞ্জয় নুলি এবং অ্যাডভোকেট আখিলা ওয়ালির সহায়তায় আবেদনটি দাখিল করেছিলেন আবেদনকারী ৷ কিন্তু প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের বেঞ্চ শুধু আবেদনটি খারিজই করেনি, বরঞ্চ অত্যন্ত বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন । এরপর প্রধান বিচারপতি গাভাইকে “আম্বেদকরবাদী” বলে নিশানা করছেন নেটিজেনরা ।
শ্রবণ বিষ্ণোই নামে এক এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই (ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই) কে দেখুন যিনি বিচারকদের সামনে এক নির্মম মিথ্যা কথা বলছেন। বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্য আমি বস্তি থেকে সুপ্রিম কোর্টে ভ্রমণ করেছি। যদিও বাস্তবতা হল তার বাবা লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন, বিহার, সিকিম, কেরালার রাজ্যপাল ছিলেন, তার বাবা একটি রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়াও গঠন করেছিলেন যেখান থেকে তিনি একজন বিধায়কও ছিলেন।’
ডঃ নেহা দাস লিখেছেন,’তুমি কি জানো? বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ ‘দ্রুতগতিতে’ সম্পন্ন করা হয়েছিল, যাতে কলেজিয়ামে “প্রতিনিধিত্ব এবং বৈচিত্র্য” নিশ্চিত করা যায়। স্বাভাবিক রুটে থাকলে, সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছাতে তার আরও ২ বছর সময় লাগত! ঠিক এই কারণেই প্রতিনিধিত্ব নয়, যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’
আর একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন,’ভগবান বিষ্ণুর মূর্তির শিরচ্ছেদ” এবং “তাহলে এখনই যাও এবং প্রার্থনা করো” বলে হিন্দুদের অনুভূতিকে অপমান করেছেন প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই । যার একটি রেকর্ড রয়েছে যা প্রতিটি হিন্দুর জানা উচিত: তিনি বুলডোজার হামলার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি রাহুল গান্ধীর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বৌদ্ধধর্ম দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত।’।

