প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ জুন : ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের সবথেকে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৩০ জনের মারা যাওয়ার ও কমপক্ষে ৯ শো জন মানুষের জখম হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে । সেই জখমদের তালিকায় পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার ৮ জন রয়েছেন। তারা এখন ওড়িশার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে মন্তেশ্বরের বিডিও গোবিন্দ দাস শনিবার জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, মন্তেশ্বর ব্লকের আরূ তিনজন বাসিন্দা রয়েছেন যাঁরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেল । দুর্ঘটনার পর থেকে বহু চেষ্টা করেও পরিবারের লোকজন কোনভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে বিডিও প্রশাসনকে ছানিয়েছেন।বিডিও কাছ থেকে এই তথ্য পেয়ে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তৎপরতা শুরু করেছে ।
জেলা প্রশাসনকে বিডিও গোবিন্দ দাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ট্রেন দুর্ঘটনায় জখমরা মন্তেশ্বর, বামুনপাড়া,ও মামুদপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২০ জন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে জখম হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত এলাকায় ৬ জন! বামুনপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার ১ জন ও মামুদপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকার ১ জন । যে তিনজনের সঙ্গে পরিবারের লোকজন কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা মন্তেশ্বর, বামুনপাড়া ও মামুদপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। দুর্ঘটনার মধ্যেও বরাত জোরে রক্ষা পেয়ে যাওয়া মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েত এলাকার দু’জন বাসিন্দা বাড়ি ফিরে আসছেন। আর মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত এলাকার ৫ জন ও মামুদপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকার ২ জন বাসিন্দা দুর্ঘটনায় রক্ষা পেয়ে যাবার পর থেকে সেখানকার আরপিএফ ক্যাম্পে রয়েছে বলে বিডিও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন ।
বিডিও গোবিন্দ দাসের সঙ্গে এদিন টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান,বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মন্তেশ্বর ব্লকে যাঁরা জখম হয়েছেন, নিখৌঁজ রয়েছেন বা আর পি এফ ক্যাম্পে রয়েছে তাঁরা সকলেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন বলেই তিনি জানতে পেরেছেন। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে বিডিও জানান। পাশাপাশি তিন এও জানান মন্তেশ্বরের ভালুচার একজন বাসিন্দা ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন এমন খবর এদিন সকালে এসেছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে বিডিও জানিয়েছেন ।
মন্তেশ্বরের পাশাপাশি বর্ধমান সদর-২ ব্লকের বড়শুল -২ পঞ্চায়েতের কুমীরকোলা নিবাসী সফিক কাজী (২৫)ও তাঁর সঙ্গী কাটোয়ার বরমপুর নিবাসী নূর মহম্মদ মল্লিক বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন বলো জানা গিয়েছে ।এই দু’জনই পেশায় রাজমিস্ত্রি ।চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রী কাজে যোগ দিতে যাবার জন্য করমন্ডল এক্সপ্রেসে রওনা দিয়েছিলেন। ট্রেনটি বালেশ্বরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর থেকে সফিকের আর কোন খোঁজ পায় না নূর । বিষয়টি সে সফিকের বাড়িতে ফোন করে জানায়। তারপর থেকে খোঁজ পাচ্ছি না । ঘটনার খবর পেয়ে সফিকের পরিবারের লোকজন এবং নূর বারে বারে সফিকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ।ফোনে রিং হলেও কেউ ধরে নি । তার পরিবার সদস্যদের কথায়! রাত ১২টা নাগাদ এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন তিনি জিআরপি স্টাফ ।সফিক হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে ওই জিআরপি স্টাফই পরিবারের লোক জন কে জানায়। বাড়িতে সফিকের স্ত্রী, চার বছর বয়সী সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা , মা রয়েছে । সফিকের পরিবারে লোকজন এদিন সকালে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ।
মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন,
‘তার বিধানসভা এলাকা মেমারির সাতগেছিয়া ইনাতনগরের তিন যুকক বালেশ্বরে হওয়া ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে। ওই যূবকদের নাম সাহিদ মণ্ডল,আলামীন শেখ ও ডালিশ শেখ । করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে এই যুবকদের কেউ চেন্নাই, কেউ কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিল । বিধায়ক বলেন,’দুর্ঘটনায় জখম হয়ে এই তিন যুবক ওড়িশার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে পরিবারের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন ।’
জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন,এখনও পর্যন্ত কাটোয়া-২ ব্লকের এক জনের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে । এই ব্যক্তি করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন।কাটৌয়া ছাড়াও দুর্ঘটনা গ্রস্তদের মধ্যে মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোট ও মেমারি বাসিন্দারাও রয়েছে ,এমনটাই খবর এখনও অব্দি পাওয়া গিয়েছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।“। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন‘,আমিও বস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছি । দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবার গুলির পাশে আমাদের সরকার রয়েছে ।।