এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,১৩ জুন : চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্পর্কীয় ভাইজিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত কোচবিহারের দিনহাটার তৃণমূল নেতা আব্দুল মান্নানের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ । আজ বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল । মামলার কেস ডায়েরি দেখে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান বিচারপতি পার্থ সারথি চট্টোপাধ্যায় । উল্লেখ্য,আব্দুল মান্নানকে ‘জেঠু’ বলে সম্বোধন করতেন নির্যাতিতা । বাবার থেকে বয়েসে অনেক বড়,এমন ব্যক্তির কি করে ওই মহিলার প্রতি লালসা জাগে এই প্রশ্ন ওঠে ৷ নির্যাতিতার পক্ষে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি আদালতে জানান যে নিজের কীর্তি ধামাচাপা দিতে নির্যাতিতাকে মারধর ও পরিবারকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল অভিযুক্ত ।
জানা গেছে,কোচবিহারের দিনহাটার ঝুড়িপাড়াতে বাড়ি আব্দুল মান্নানের ৷ তিনি দিনহাটার বড় আঁটিয়া বাড়ি ২ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন । এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা বলে পরিচিত ছিলেন মান্নান । অন্যদিকে বছর ২২-এর নির্যাতিতা কলেজে পড়াশোনা করতে করতে বিয়ে হয়ে যায় । তবে বিয়ের পরেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন । আর তার লেখাপড়ার সুবিধার্থে অধিকাংশ সময় বাপের বাড়িতে থাকেন । মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়ি যান ।
নির্যাতিতার অভিযোগ,প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি দেওয়ার নাম করে গত ১৪ ই মার্চ ঘটনার মাস ছয়েক আগে তার বাবার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল তৃণমূল নেতা আব্দুল মান্নান । কিন্তু চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত এর জন্য আব্দুল মান্নানকে চাপ দেন তিনি । কিন্তু ওই তৃণমূল নেতা টালবাহানা করতে থাকে । এরপর গত ১৪ ই মার্চ আব্দুল মান্নান তরুণীর বাবাকে ফোন করে বলে যে ইন্টারভিউ রয়েছে তার মেয়েকে আসতে হবে । জানা গেছে, সেই মতো মান্নান তরুণীর বাড়িতে নিজের গাড়ি পাঠায় । তরুণীকে সেই গাড়িতে তুলে ঝুড়িপাড়াতে মান্নানের ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যায় । সেখানে ভয় দেখিয়ে মান্নান তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ । শুধু তাই নয়, তরুণীর নগ্ন ছবি ও ভিডিও করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগও উঠেছে ।
নির্যাতিতা তরুনীর আরও অভিযোগ, আব্দুল মান্নান তাকে হুমকি দেয় যে যদি তাকে ফের টাকা চাওয়া হয় তাহলে ওই সমস্ত অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও স্বামীর মোবাইলে পাঠাবে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল করে দেবে । অভিযোগ যে ধর্ষণের পর মহিলাকে মদ পানের জন্য জোর জবরদস্তি করে তৃণমূল নেতা মান্নান । মহিলা মদ পান করতে অস্বীকার করলে কাচের বোতল দিয়ে মেরে তার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং তাকে মারধর করে । কিন্তু মহিলা চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তিনি পালাতে সক্ষম হন। পরে দিনহাটা মহিলা থানায় বাবার সঙ্গে গিয়ে আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে গেলে মান্নান পালিয়ে যায় । যদিও পরের দিন সে নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করে । তার আগে নির্যাতিতা ও তার পরিবারকে হুমকির অভিযোগ সামনে আসার পর বিচারপতি অমৃতা সিনহা এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু অভিযোগকারী মহিলাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেন।
নির্যাতিতার মা সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছিলেন তৃণমূল নেতা আব্দুল মান্নান গ্রামের বহু মহিলার সঙ্গে এমন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে । কিন্তু কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেনি । অভিযুক্ত ধর্ষক তৃণমূল নেতার কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিতা মহিলা এবং তার পরিবার ।এদিকে এই ঘটনার পর চরম অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসকদল । মান্নান গ্রেপ্তার হতেই সাংবাদিক সম্মেলন করে তাকে দল থেকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা করা হয় । তবে জানানো হয়েছে যে অভিযোগ মিথ্যা প্রমান করতে পারলে মান্নানের দলে ফিরে আসার রাস্তা খোলা আছে।।

