এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,১২ ডিসেম্বর : মা কাজে যাওয়ার সময় বাড়ির মালিকের দায়িত্বে দুই কিশোরী মেয়েকে রেখে যেত । আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়ির প্রৌঢ় মালিক ওই দুই নাবালিকাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে যাচ্ছিল । অবশেষে আজ জলপাইগুড়ি জেলার বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক রিন্টু সুর অভিযুক্ত প্রৌঢ়কে ২০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২ লক্ষ টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন । জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত দু’মাস করে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন তিনি । পাশাপাশি দুই নির্যাতিতাকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে,ঘটনার সময় নির্যাতিতা দুই বোনের মধ্যে বড় বোনের বয়স ছিল ১৮ বছর এবং ছোট বোনের বয়স ১৫ বছর । জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে মেয়ে দুটিকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন তাদের মা । নির্যাতিতা দুই কিশোরীর মা একটা প্লাইউড কোম্পানিতে চাকরি করেন । কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তিনি মেয়ে দুটির সুরক্ষার দায়িত্ব বাড়ির মালিকের ওপর দিয়ে যেতেন ৷ ওই বাড়িতে আসামি তার বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে বসবাস করত ।
জানা গেছে, বড় মেয়েটি গত ১৯/০৫/২০২৫ তারিখে কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে । মেয়েটির অভিযোগ যে তার মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়ির মালিক তাকে এবং তার ছোট বোনকে দিনের পর দিন ধরে ধর্ষণ করে যাচ্ছিল । শুধু তাই নয় বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসেও তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হতো বলে তার অভিযোগ ।
জানা গেছে, বাড়ির মালিকের এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বড় মেয়েটি প্রথমে প্রতিবেশীদের ঘটনার কথা জানায় । মেয়েটির কাছ থেকে এই কথা শোনার পর প্রতিবেশীরা তাদের গ্রাম্য পুলিশকে ফোন করে আসতে বলে ৷ গ্রাম্য পুলিশ এসে মেয়ে দুটির কাছে ঘটনার কথা শোনার পরে তিনি।কোতোয়ালি থানাতে খবর দেন । এরপর পুলিশকে মেয়ে দুটিকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায় । দুটো মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা এবং আদালতে গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। পাশাপাশি আসামীকে গ্রেফতার করে তিন দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ । পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয় । তখন থেকে আসামি জেলেই ছিল ।
গ্রেফতারির দু মাসের মধ্যে আদালতের চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ । এই মামলায় মোট ৯ জন সাক্ষী ছিল । উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে আজ শুক্রবার আদালত আসামির সাজা ঘোষণা করে । বড় মেয়েটিকে ধর্ষণের জন্য কুড়ি বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২ লক্ষ টাকা জরিমান এবং অনাদায়ে আরও দু’মাসের অতিরিক্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্যাতিতাকে সরকারিভাবে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ ছোট মেয়েটিকে ধর্ষণের করার জন্য কুড়ি বছরের কারাদণ্ড, দু লক্ষ টাকায় জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত দু মাসের কারাদন্ডের নিজেদের দেওয়া হয়েছে । একইভাবে ছোট মেয়েটিকেও ৫ লক্ষ টাকা ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিসকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত । তবে সাজার মেয়াদ একই সাথে চলবে বলে জানা গেছে ।।

