প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ মে : দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময়ে সড়ক পথে পাল্টি খাওয়ার পর ক্যানেলের ব্রিজ টপকে ঝুলে থাকলো সরকারী যাত্রীবাহী বাস। সোমবার বেলা ১০ টা নাগাদ ভয়াবহ এই পথ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির কানাইডাঙা এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনায় ওই সরকারী বাসের (এস বি এস টি সি) সাত জন যাত্রী আহত হন । স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথম দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রীদের উদ্ধার কাজে হাত লাগায়।পরে খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে আহতদের মধ্যে ছয় জনকে বর্ধমান ’অনাময়’ সপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠায়। এর পর ক্রেনের সাহায্যে ঝুলন্ত বাসটিকে সড়ক পথে তোলা হয় ।দুর্ঘটনাগ্রস্ত সরকারী বাসটির চালক ও কন্ডাক্টরকে আটক করে পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।
পুলিশ ও বাস যাত্রীদের কথায় জানা গিয়েছে, এস বি এস টি সির যাত্রীবাহী বাসটি এদিন সকাল ৮ টা নাগাদ কলকাতার করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে।জনা ৫০ যাত্রী নিয়ে বাসটি আসানসোল যাচ্ছিল। বাসের যাত্রী সৌরভ বোসজানিয়েছেন,তাঁর বাড়ি আসানসোলে । তিনি কলকাতায় চাকরি করেন । আসানসোলের বাড়িতে ফেরার জন্য এদিন সকালে তিনি করুনাময়ী থেকে বাসটিতে চাপেন। কলকাতা থেকে ছাড়ার পর বাসটি ঠিকঠাকই চলছিল।তার পর জাতীয় সড়কে ওঠার পরেই চালক বাসটির গতী বাড়িয়ে দেন। আর অতিরিক্ত গতী শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে ।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌরভ বলেন,’বাস নিরাপদেই আসানসোল পৌছাবে ধরে নিয়ে বাসের সিটে বসে থাকা প্রায় সব যাত্রীই ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন । এরই মধ্যে দ্রুত গতীতে চলা বাসটি মেমারির কানাইডাঙা এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দু’বার পাল্টি খায়।তার পর বাসটির ধাক্কায় রাস্তার ধারের রেলিং ভেঙে গেলে যাত্রী ভর্তি বাসটি ক্যানেলের ব্রিজ টপকে ঝুলতে থাকে । সৌরভ বোস এও জানান ,বরাত জোরে এতবড় দুর্ঘটনায় কারুর প্রণহানীর ঘটনা ঘটে নি । তিনি শুধু মাত্র পায়ে অল্প চোট পেয়েছেন ।বাকি ৭-৮ জনের আঘাত তেমন গুরুতর থাকে নি । পুলিশ এক বয়স্ক মহিলা যাত্রী সহ ছয় জনকে ’অনানয়’ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায় ।তাঁদের মধ্যে ওই মহিলাই বেশী জখম ছিলেন । হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে,জখম পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই মহিলা বাস যাত্রীর নাম যমুনা তালুকদার । তিনি দমদমের নাগের বাজারের বাসিন্দা। দুপুরে তাঁকে অনাময় হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে ।
সৌরভ বোসের মতই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের যাত্রী ছিলেন কলকাতার কলুপুকুর নিবাসী সুকদেব ঘোষ । তিনি জানান , দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে যাবার জন্য এদিন সাকালে তিনিও করুণাময়ী থেকে আসানসোল গামী বাসটিতে চেপে ছিলেন । শুকদেব বাবু বলেন,’জাতীয় সড়ক দিয়ে দ্রুত গতীতে যাবার সময়ে ডানদিক চলে গিয়ে কাঁপতে কাঁপতে চলন্ত বাসটি আচমকাই পাল্টি খায় । তার পর ব্রিজের রেলিং টপকে বাসটি ঝুলতে থাকে । ওই সময়ে বাসে থাকা সব যাত্রীরাই বাসের একদিকে গড়িয়ে পড়েন । তারই মধ্যে বাসটির সামনের কাচ ভেঙে গেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ওই জায়গা দিয়ে তাঁরা একে একে নিচে নেমে পড়েন । সেচ ক্যানেলে জল না থাকায় নামতে অসুবিধা হয় নি ।’
কানাইডাঙা এলাকার বাসিন্দা সমীর রায় বলেন, ‘ক্যানেলের ব্রিজের রেলিং টপকে যাত্রী বোঝাই বাসটি যদি একেবারে নিচে আছড়ে পড়তো তাহলে অনেকেরই প্রাণহাণি হতে পারতো। বরাত জোরে বাসটি রেলিং টপকে ঝুলে থাকায় বাসের সবাই রক্ষা পেয়ে গিয়েছেন’। প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের যাত্রীদের ধারণা,হয়তো বাস চালানোর সময়ে চালকও ঘুম আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন ।তার কারণে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলাতেই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ।
মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (বর্ধমান দক্ষিন)
সুপ্রভাত চক্রবর্তী দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এদিন
স্পষ্ট কিছু জানাতে চান নি। তিনি শুধু বলেন,
“কি কারণে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লো তার তদন্ত শুরু হয়েছে ।বাসটির মেকানিক্যাল পরীক্ষার পর দুর্ঘটনার কারণ জানা যাবে“ ।
এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল যদিও দাবি করেন , “বৃষ্টির জন্যে রাস্তার ধারের মোরাম ভিজে ছিল । বাসের চাকা সেখানে বসে যাওয়াতেই বিপত্তি ঘটে । বাসটি ’গার্ড ওয়ালে’ ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে“ । সুভাষ মণ্ডল এও জানান, দুর্ঘটনার পরে সংস্থার আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যান । ওই বাসের যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পাঠানোর জন্য অন্য বাস পাঠানো হয় ।।