এইদিন ওয়েবডেস্ক,খুলনা,২১ আগস্ট : কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তর উল্লিখিত কপোতাক্ষ নদীতে মাছ ধরার সময় এক জেলের জালে উঠে এলো একটি বিশালাকৃতির শিবলিঙ্গ । বাংলাদেশের খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির গোলাবাটি এলাকায় নদীর জল থেকে শিবলিঙ্গটি উদ্ধার করেছেন জগদীশ বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক জেলে । এদিকে এই খবর চাওড় হতেই নদীর তীরে ছুটে আসেন এলাকার প্রচুর হিন্দু নারী ও পুরুষ । “হর হর মহাদেব” ধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ বাতাস ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কপিলমুনির গোলাবাটি এলাকার বাসিন্দা জগদীশ বিশ্বাস প্রতি বছর বর্ষার মরশুমে নিয়মিত কপোতাক্ষ নদীতে মাছ ধরেন। শুক্রবার রাতে তিনি পাটা জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ জাল টানতে গিয়ে অস্বাভাবিক ভার অনুভব করেন। জাল পাড়ে টেনে আনতেই দেখা যায়,জলের ভেতর থেকে ভেসে উঠেছে এক বিশাল পাথরের বস্তু, যার মাথা শিবলিঙ্গের মতো। জগদীশ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম হয়তো বড় কোনো গাছের গুড়ি জালে আটকে গেছে। কিন্তু নদীর তুলতেই দেখি বিশাল শিবলিঙ্গ! মুহূর্তেই আমি বুঝতে পারি এটি মহাদেবের প্রতীক। তাই আমি সযত্নে এটিকে উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে যাই।’
এদিকে শিবলিঙ্গ উদ্ধারের কথা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ভিড় জমে যায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন এই ঘটনাকে শুভলক্ষণ হিসেবে দেখছেন। অনেকেই বলছেন, “শিবলিঙ্গের আবির্ভাব মানে মহাদেবের আশীর্বাদ। এই পবিত্র বস্তু যেখানে পাওয়া গেছে, সেই স্থানকে পূণ্যভূমি হিসেবে মানা উচিত।” বর্তমানে শিবলিঙ্গটি জগদীশ বিশ্বাসের বাড়িতে রাখা হয়েছে। সেখানে স্থানীয় ভক্তরা গিয়ে পূজা-অর্চনা করছেন। ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড়ে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছে যে শিবলিঙ্গটি যেন একটি স্থায়ী মন্দিরে সংরক্ষণ করে যথাযথ পূজা-অর্চনার ব্যবস্থা করা হয় । তারা বলছেন, “এটি শুধু একটি পাথরের টুকরো নয়, এটি আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক এবং কপোতাক্ষ নদীর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।” এই ঘটনার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তারা কি ব্যবস্থা নেবেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবলিঙ্গটির ছবি ছড়িয়ে পড়েছে এবং ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, শিবলিঙ্গের গঠনশৈলী অনুযায়ী এটি শতাব্দী প্রাচীন । ইসলামি হানাদারদের দ্বারা অপবিত্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে শিবলিঙ্গটি কপোতাক্ষ নদের জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করছেন তারা ।
প্রসঙ্গত,কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক ভিটা যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে । এই গ্রামেই তিনি ১৮২৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক বাড়ির ঠিক সামনে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে কপোতাক্ষ নদ । কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব নদী থেকে এবং এটি পরে খুলনা জেলার কয়রায় খোলপটুয়া নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে । কবির শৈশবের জীবন এই নদীর তীরে খেলাধুলা করে কেটেছিল । কিন্তু তিনি যৌবনে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে কবিকে ত্যাজ্যপুত্র করেন তার বাবা রাজনারায়ণ দত্ত । কলকাতায় খ্রিস্টান হওয়ার পর শেষ বারের মত একবার তিনি সাগরদাঁড়ি গ্রামে গিয়েছিলেন । কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাকে । অসুস্থা মা জাহ্নবী দেবীর মুখ দর্শন করার জন্য কয়েকটা দিন কপোতাক্ষ নদের তীরে একটা গাছের নিচে ক্যাম্প করে কয়েকদিন নদীর কুলে একটা গাছের নিচে কাটিয়েছিলেন । কিন্তু হতাশ হয়ে তাকে কলকাতায় ফিরে আসতে হয় ।
“কপোতাক্ষ নদ” চতুর্দশপদী কবিতায় কবি আক্ষেপ করে লিখেছেন : “বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে/ কিন্তু এ স্নেহের তৃয়া মিটে কার জলে? / দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্ম-ভূমি-স্তনে ! / আর কি হে হবে দেখা?” মনে করা হয় যে শেষ বারের মত প্রিয় নদীর তীরে অবস্থানকালেই তিনি এই কবিতা রচনা করেছিলেন ।।

