এইদিন স্পোর্টস নিউজ,২৪ আগস্ট : মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনেই উন্মোচন করা হল ভারতের ক্রিকেট কিংবদন্তী সুনিল গাভাস্কারের পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য । মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) উদ্যোগে শারদ পাওয়ার ক্রিকেট জাদুঘরের উদ্বোধনের দিনে গাভাস্কারের ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়।অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন স্বয়ং গাভাস্কার। সেই সাথে তিনি স্ত্রী, ছেলে প্রাক্তন ক্রিকেটার রোহান গাভাস্কার, ছেলের বউ এবং নাতি-নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে যান ।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গাভাস্কার সবশেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলার ৪০ বছর পূর্ণ হবে আগামী বছর। এখনও এই মাঠে রানের তালিকায় তার কাছাকাছি নেই কেউ। এখানে ১১ টেস্টে ৫৬.১০ গড়ে ১ হাজার ১২২ রানের রেকর্ড রয়েছে গাভাস্কারের নামে । মুম্বাইয়েরই আর এক কিংবদন্তি সন্তান সচিন টেন্ডুলকার ১১ টেস্টে ৯২১ রান নিয়ে আছেন তালিকার দু’নম্বরে । এই মাঠে গাভাস্কারের টেস্ট সেঞ্চুরি ৫টি। আর কোনো ব্যাটসম্যানের ২টির বেশি সেঞ্চুরি নেই। তবে শুধু এই মাঠই তো নয়, গাভাস্কারের এমন পারফরম্যান্সের স্বাক্ষী গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। অভিষেক সিরিজেই ক্যারিবিয়ান রাঙিয়ে ৭৭৪ রানের রেকর্ড গড়ে টেস্ট ক্রিকেটে তার পথচলার শুরু। সেই রেকর্ড টিকে আছে ৫৪ বছর পরও। তার পর আরও অনেক কীর্তি গড়েছেন তিনি । জায়গা করে নিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।
তার রেকর্ড-অর্জনের অনেক কিছুই পরে টপকে গেছেন অন্য ব্যাটসম্যানরা। তবে তার ব্যাটসম্যানশিপ এখনও অনন্য। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনারদের একজন, সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হিসেবে তিনি সমাদৃত গোটা বিশ্বে ।
ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর সুনিল গাভাস্কার । তার নেতৃত্বেই ‘মিনি বিশ্বকাপ’ নামে খ্যাত হয়ে যাওয়া ১৯৮৫ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেটে শিরোপা জয় করে ভারত। গর্বিত একজন ‘মুম্বাইকার’ হিসেবেও নিজেকে সবসময় পরিচয় দিতে ভালোবাসেন গাভাস্কার। মুম্বাইয়ের (তখনকার বোম্বে) হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭৭ ম্যাচে ২২ সেঞ্চুরিতে তার রান ৬৪.১০ গড়ে ৫ হাজার ৮৯৮। নিজের সেই শহরে, সেই মাঠেই অমর হয়ে রইলেন তিনি ।
ভাস্কর্য উন্মোচনের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে গাভাস্কার শোনান তার রোমাঞ্চ আর গর্বের কথা। কৃতজ্ঞতা জানানা এমসিএর প্রতি। তিনি বলেন,’সত্যি বলতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এমন অনন্য সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত। জাদুঘরের ঠিক বাইরেই এরকম একটি ভাস্কর্য, সবাই এমন সম্মান পায় না।’ তিনি আরও বলেন,’আগেও অনেকবার বলেছি, মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আমার মায়ের মতো। স্কুলে যখন ক্রিকেট শুরু করলাম, বোম্বে স্কুলের হয় খেলতাম, তখন থেকেই হাত ধরে আমাকে এগিয়ে নিয়েছে এই সংস্থা। এরপরও রাঞ্জি ট্রফি ও আরও অনেক দূরের পথচলায়ও তারা ছিল আমার সঙ্গী। মুম্বাইয়ের হয়ে খেলতে পারা ছিল অনেক বড় আশীর্বাদ ও সম্মানে। কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি যে এসব সত্যি হবে।’
ভাস্কর্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে গাভাস্কারের ১০ হাজার রান ছোঁয়ার উদযাপনের মুহূর্তটি। ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে যখন আর ১ রান প্রয়োজন, অফ স্পিনার ইজাজ ফাকিহর বল লেট কাট করে থার্ডম্যানের দিকে পাঠিয়েই ব্যাট উঁচিয়ে দৌড় শুরু করেন গাভাস্কার। দুই রান নিয়ে উদযাপন করেন আবার। গ্যালারি তখন উত্তাল । অনেক দর্শক মাঠে ঢুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান তাকে। দর্শকদের উন্মাদনায় খেলা বন্ধ থাকে মিনিট কুড়ি । শট খেলেই ব্যাট উঁচিয়ে দৌড় শুরু করার মুহূর্তটিই চিরজীবন্ত করে রাখা হয়েছে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ভাস্কর্যে।
ম্যাচটি ছিল অবশ্য আহমেদাবাদে। তবে অর্জনটি তো ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যই গৌরবের। সেই উদযাপনের মুহূর্তটি ভাস্কর্যে রূপ দেওয়া কারণ ব্যাখ্যা করলেন এমসিএ প্রধান আজিঙ্কা নায়েক। তিনি বলেন,’আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ভারতীয় ক্রিকেটে তার নিজের সেরা মুহূর্ত কোনটি। তিনি কিছু ছবি আমাকে দেখিয়েছিলেন। আমার মনে হয়েছে, এটিই তার জন্য, মুম্বাই ও ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যও সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।’ গাভাস্কার নিজেও এতে দারুণ আপ্লুত। তার প্রতিক্রিয়া হল,’এটা আমাকে ওই মুহূর্তটিতে নিয়ে গেছে, যখন ওই বলটি করা হয়েছিল এবং আমি ১০ হাজার রান ছুঁয়েছিলাম। দারুণ সব স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে এই ভাস্কর্য।’
জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। গাভাস্কার নিজে জাদুঘরে উপহার দিয়েছেন তার স্মৃতিময় দুটি ক্যাপ। ১৯৭৬ সালের স্মরণীয় সেই লর্ডস টেস্টে নিজের জার্সি উপহার দিয়েছেন ভারতীয় গ্রেট দিলিপ ভেঙ্গসরকার, ২০২৩ বিশ্বকাপের জার্সি ও ব্যাট দিয়েছেন রোহিত শার্মা। জাদুঘরটি ক্রমে সমৃদ্ধ করে তোলা হবে আরও নানা স্মারকে, বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ ।।