এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,১৫ ডিসেম্বর : রাশিয়ান “ভদকা” ভেবে পশ্চিমবঙ্গের “বাংলা মদ” পান করে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিলেন একজন ফরাসি যুবক । নেশায় চুর হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ির পাশাপাশি ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে অস্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন । প্রথমে সিভিক ভলেন্টিয়াররা তাকে সামলাতে আসেন । কিন্তু সাড়ে ছ ফুট দৈর্ঘের ওই ফরাসি যুবককে সামলাতে পারেননি সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার সিভিক ভলেন্টিয়াররা । তারা থানায় গিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের ডেকে আনেন । কিন্তু পুলিশও বিশালাকৃতির ওই ফরাসি যুবককে প্রথমে সামলাতে পারেননি ৷ প্রবল ঠান্ডাতেও ওই ফরাসি যুবককে সামলাতে গিয়ে তাদের গলদঘর্ম হতে হয় । শেষে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে বাগে এনে চ্যাংদোলা করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ । কিন্তু ওই বিদেশি যুবকের একটু নেশা কাটতেই হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে যান । শুক্রবার রাতের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল কান্ড বেঁধে যায় আলিপুরদুয়ারের বারোবিশা এলাকায় ।
ওই বিদেশী যুবকের পরিচয় সেভাবে জানা না গেলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে যে তার বাড়ি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে । নাম অগেস্টো । ফেসবুকের মাধ্যমে কোচবিহারের তুফানগঞ্জে জনৈক মন্টি নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব করে উঠেছিল । সম্প্রতি বন্ধুর জন্মদিন ছিল । বন্ধুর জন্মদিন পালন করতে তুফানগঞ্জে এসেছিলেন অগেস্টো । কিন্তু কোচবিহারে আসার পর বন্ধুর মোবাইল ফোনের সুইচ অফ থাকায় পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি । শেষ পর্যন্ত মন্টির খোঁজ পেয়ে সটান তার বাড়িতে হাজির হন অগেস্টো ৷ বন্ধুর জন্মদিনের উপহার হিসাবে তুলে দেন একটা দামি আই ফোন৷ তারপর থেকে তিনি তুফানগঞ্জেই ছিলেন ওই ফরাসি যুবক ৷
জানা গেছে,মিশুকে স্বভাবের কারনে কিছুদিনের মধ্যেই এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অগেস্টো ৷ নতুন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান ওই ফরাসি যুবক৷ কিন্তু শুক্রবার রাতে বারোবিশায় ঘুরতে গিয়ে তার ভারত ভ্রমনের তাল কেটে যায়৷ সেখানে একটা বাংলা মদের ঠেকে হাজির হন অগেস্টো ৷ জুটে যায় কয়েকজন সঙ্গীসাথীও ৷ কয়েকজন স্থানীয় যুবককে মদ্যপান করতে দেখে অগেস্টো তাদের মদের নাম জানতে চান । স্থানীয় যুবকরা “বাংলা মদ”-এর বোতল দেখিয়ে বলেন ” ইটস্ রুশিয়ান ভদকা” । এরপর “ভদকা” ভেবে দেদার “বাংলা মদ” পান করেন তিনি । অবশ্য তার মদ্যপানের খরচ নতুন বন্ধুরাই দিয়ে দেন । এদিকে “বাংলা মদ”-এর নেশায় চুর ফরাসি যুবকের মেজাজ হঠাৎ সপ্তমে চড়ে যায় । তার রুদ্ররূপ দেখে একে একে সরে পরে । এদিকে অগেস্টো তখন বারোবিশার সড়কপথে এসে চিল চিৎকার শুরু করে দেন । পাশাপাশি ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে চলে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি ।
জানা গেছে,প্রথমে কর্তব্যরত সিভিক ভলেন্টিয়াররা এসে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে৷ কিন্তু সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার সিভিকরা সাড়ে ছয় ফুটের অগেস্টোকে কিছুতেই বাগে আনতে পারেননি । ফলে তারা রনে ভঙ্গ দেন । এরপর সিভিক ভলেন্টিয়াররা থানায় গিয়ে ঘটনার কথা জানায় । খবর পেয়ে পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে আসেন । কিন্তু বিশাল আকৃতির অগেস্টোকে কব্জায় আনতে গিয়ে প্রবল ঠান্ডাতেও গলদঘর্ম হতে হয় পুলিশ আধিকারীদের । ওই ফরাসি যুবক রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে শুরু করেন । শেষে স্থানীয়দের সহায়তায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী তাকে চ্যাংদোলা করে কামাখ্যাগুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু চিকিৎসা নিতে অস্বীকার করেন ওই ফরাসি যুবক । ডাক্তারদের তিনি রীতিমতো গালিগালাজ শুরু করেন । বেগতিক বুঝে চিকিৎসকরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের স্থানান্তরিত করে দেয় । সেখানে এমার্জেন্সিতে রেখে তাকে চিকিৎসা শুরু করা হয়৷ কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার চোখে ধুলো দিয়ে উধাও হয়ে যান ওই বিদেশী যুবক । তারপর থেকে আর পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি ।
জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মন্ডল বলেন, ‘আমরা তো এই বিদেশির চিকিৎসা করার সুযোগ পর্যন্ত পাইনি । হঠাৎ দেখিনি উধাও হয়ে গেছেন । এমনকি হাসপাতালে রেজিস্টারে তার নাম নথিভুক্ত করার পর্যন্ত সুযোগ পাইনি ।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘জীবনে অনেক মাতাল দেখেছি কিন্তু এমন মাতাল এই প্রথম দেখলাম ।’।

