এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৩ জুন : বিপুল অঙ্কের দেনায় পড়ে গিয়েছিলেন বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী । তার মধ্যে এক পাওনাদার ব্যবসায়ী টাকা ফেরতের জন্য ক্রমাগত তাগাদা করছিলেন । টাকা না পেয়ে বাড়িতে এসে স্ত্রী ও কিশোরী মেয়ের সামনেই অপমানজনক কথাবার্তার পাশাপাশি তাকে চড়থাপ্পড় মারেন । সেই অপমান তিনি সহ্য করতে পারেননি । এরপর আজ মঙ্গলবার সকালে বাড়ির অদূরে কালীমন্দিরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় । মৃতের নাম পার্থসারথি বারিক (৪৫)। মৃতের স্ত্রী অপরূপা বারিক, ‘রাতে ওনার জ্বর এসেছিল । খাওয়া দাওয়ার পর সবাই আমরা ঘুমিয়ে পড়ি । আজ ভোরে আমরা ওঠার আগেই আমার স্বামী বাড়িতে স্নান সেরে কালী মন্দিরে চলে যান । আমরা কেউ টের পাইনি । পরে সকালের দিকে প্রতিবেশীরা খবর দেয় আমার স্বামী মন্দিরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।’ জানা গেছে, পার্থসারথিবাবুকে অপমান ও চড়থাপ্পড় মারা ওই ব্যবসায়ীর নাম স্বপন সেন ৷ তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা । তবে এনিয়ে থানায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে । পুলিশ একটা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।
জানা গেছে,আউশগ্রাম থানার কাছাকাছি বাড়ি পার্থসারথিবাবুর ।বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী এবং ১৩ বছরের মেয়ে। তিনি আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি করতেন । বছর চারেক আগে শখ করে একটি চারচাকা গাড়ি কিনেছিলেন তিনি । তারপর থেকেই আর্থিক সঙ্কটে পড়ে যান। মৃতের স্ত্রী অপরূপাদেবী জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়ি থেকে একটা সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে । তাতে ৩ জন পাওনাদারের নাম উল্লেখ করে গেছেন তিনি । পাওনাদারের মধ্যে রয়েছেন বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী স্বপন সেন ও আউশগ্রাম স্কুলেরই এক শিক্ষক । দু’জনেই আউশগ্রামের গ্রামের বাসিন্দা । তিনি বলেন,’টাকার জন্য বছর দুয়েক আগে ব্যবসায়ী স্বপন সেনের কাছে গাড়িটি বন্ধক দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু ছয়মাস পর থেকেই স্বপনবাবু ক্রমাগত তাগাদা শুরু করেন ।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,সোমবার সোজা পার্থসারথিবাবুর বাড়িতে তাগাদায় আসেন স্বপন সেন । স্ত্রী ও মেয়ের সামনেই তিনি পার্থসারথিবাবুকে অপমানজনক কথাবার্তা বলেন । শুধু তাইই নয়, চড়থাপ্পড় পর্যন্ত মারেন তাকে । যাতে চরম অপমানিত হন পার্থসারথিবাবু । ঘটনার পর তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন ।আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকির মণ্ডল বলেন,’ভীষণ দায়িত্বশীল এবং সৎ মানসিকতার ছিলেন পার্থসারথিবাবু । তার প্রবল আত্মস্মান বোধ ছিল ।’
আর সোমবার স্ত্রী কন্যার সামনে সেই অপমান ভুলতে না পেরে তিনি আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছেন পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা । আজ সকালে থানার পাশে কালীমন্দিরে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । তবে তিনি দেনার কথা অস্বীকার করে যাননি । মন্দিরে আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে সুইসাইড নোটে তিন পাওনাদারের নাম লিখে গেছেন তিনি । তবে কাউকে দোষারোপ করেননি । এদিকে নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছেন মৃতের স্ত্রী ।।

