প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ সেপ্টেম্বর : স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অর্থ নিয়ে বেলাগাম দুর্নীতি ও আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমে গর্জে উঠে ছিলেন গোষ্ঠীর নেত্রী।তার বদলা নিতে গোষ্ঠীর ওই নেত্রীর স্কুল শিক্ষক জামাইকে ফাঁসানো হল ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করার মিথ্যা অভিযোগে।যে অভিযোগ পত্রে আবার জ্বলজ্বল করছে ছাত্রীর অভিভাবকদের জাল স্বাক্ষর।এনিয়ে শুক্রবার ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বিডিও অফিসে।জাল স্বাক্ষরে নাম থাকা অবিভাবকরা বিডিও পার্থসারথী দে’র সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।তাঁরা পড়ুয়া দরদি একজন সজ্জন শিক্ষককে মিথ্য অভিযোগে ফাঁসাতে চাওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান।সেই দাবি বিডিও মেনে নিলে তার পর অবিভাবকরা শান্ত হন ।
যে শিক্ষকের নামে ছাত্রীদের সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করা মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর নাম শেখ নবিউল্লা ।তিনি জামালপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জামালপুর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। কোন ষড়যন্ত্রকারী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে গত ৩০ আগষ্ট জামালপুর ব্লকের বিডিও এবং ব্লকের স্কুল পরিদর্শকের (প্রাইমারি) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা করেন।সেই অভিযোগ পত্রে স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীর অবিভাবকের নামে স্বাক্ষর করা থাকে । ওই অভিযোগ পত্রটি স্কুল পরিদর্শক জামালপুর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ মাণ্ডিকে পাঠিয়ে রিপোর্ট তলব করেন । তখনই এমন অভিযোগ পত্র দায়ের হওয়ার কথা জেনে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান শিক্ষক শেখ নবিউল্লা ।
এদিকে পড়ুয়া দরদি সজ্জন শিক্ষক শেখ নবিউল্লা মহাশয়ের নামে ব্লক প্রশাসনে অভিযোগ জমা পড়ার কথা জেনে অবিভাবকরা চঠে লাল হয়ে যান। অভিযোগকারী করা তা নিয়ে অবিভাবকরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন । তখন অভিযোগ পত্রের বয়ান ও তাতে থাকা স্বাক্ষরকারীদের স্বাক্ষর চাক্ষুষ করে অবিভাবকদেরই চোখ কপালে উঠে। অনেক অবিভাবক দেখেন তাঁরা অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর না করলেন তাঁদের নাম ব্যবহার করে কেউ অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করে দিয়েছে। আবার যারা সম্পূর্ণ নিরক্ষর তাঁর নাম দিয়ে অভিযোগ পত্রে ইংরেজিতে স্বাক্ষর করা রয়েছে এমন উদাহরণও পান অবিবাবকরা । এসব দেখে তাঁরা রাগে জগরাতে শুরু করেন।।অভিযোগ পত্রে লেখা অভিযোগ যে সম্পূর্ন মিথ্যা এবং শিক্ষক শেখ নবিউল্লা যে প্রকৃতই পড়ুয়া দরদি একজন সজ্জন শিক্ষক,সেই কথা উল্লেখ করে পাল্টা একটি দরখাস্ত লেখেন অবিভাবকরা।সেই দরখাস্তে জামালপুর বালিকা বিদ্যালয়ে পাঠরত আনেক ছাত্রীর মায়েরা স্বাক্ষর করে এদিন বিডিওর কাছে দাখাল করেন । পাশাপাশি অবিভাবকের নামে জাল স্বাক্ষর করে শিক্ষক শেখ নবিউল্লার নামে অভিযোগ দায়েরকারীকে চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি ও জানান । শুধু অবিভাকরাই নয় ,বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রীও এদিন ক্যামেরার মুখোমুখি হয়ে জানায় নবিউল্লা স্যার খুব ভালো । স্যার তাদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন । খারাপ ব্যবহার কোন দিনাই স্যার স্কুলের কারুর সঙ্গেই করেননি ।
এ বিষয়ে বিডিও (জামালপুর ) পার্থসারথী দে বলেন,শিক্ষক শেখ নবিউল্লার নামে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগ পত্র আমার কাছে জমা পড়ে । পাল্টা অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করে অনেক অবিভাবকের স্বাক্ষর করা একটি দরখাস্ত আজ আমি পেছেছি। বিডিও বলেন, গোটা বিষয়টি এখন তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে । কেউ যদি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে থাকে তাহলে আমি আইন মাফিক ব্যবস্থা নেব ।’ আর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুণ মাণ্ডি বলেন, ‘অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য স্কুলেএসে পড়ুয়া ও তাঁদের বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি এস আই ম্যাডামকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।’ অনেক চেষ্টা করেও এস আই অনিন্দিতা সাহা মহাশয়ার কোন প্রতিক্রিয়া এদিন পাওয়া যায়নি ।
তবে এত কিছুর মধ্যেও যে প্রশ্ন সবার মনে ঘুর পাক খাচ্ছে তা হল একজন সজ্জন শিক্ষককে এভাবে মিথ্য অভিযোগে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্রকারী কারা ? এই প্রশ্নের উত্তর এদিন দিয়ে দিয়েছেন খোদ শিক্ষক শেখ নবিউল্লা নিজেই । তিনি বলেন,আমি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নর । তবে আমার শাশুড়ি মা মীরাতাজ বেগম স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে ৪-৫ বছর ধরে লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিকে সামনে রেখে তিনি জামালপুরের বহু মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে মিটিং মিছিল সংঘটিত করেছেন। তার বদলা শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে নিতে না পরে জামালাপুর ১ অঞ্চলের দণ্ডমুডের কর্তারা মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিল । যদিও অবিভাবক ও স্কুলের ছাত্রীরাই সেই মিথ্যা অভিযোগের পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে“। মীরাতাজ বেগম বলেন,’স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতি নিয়ে লড়াই এবার আরো জোরদার করবো ।পাশাপাশি আরজি কর কাণ্ড নিয়ে আরো বেশী করে পথে নামবো। শাসক দলের জামালপুরের নেতারা ক্ষমতা থাকলে আমার সঙ্গে লড়ে দেখাক ।।