জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দূর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),১১ নভেম্বর : রঙিন মায়াবী আলোর ঝলকানির পরিবর্তে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের সুপরিচিত চিকিৎসক দম্পতির একমাত্র কন্যার জন্মদিন পালিত হল ভিন্ন আঙ্গিকে, চার দেওয়ালের বাইরে, সবার মাঝে। এভাবেই গত এগারো বছর ধরে ডাঃ উদয়ন চৌধুরী ও ডাঃ কবিতা চৌধুরী তাদের একমাত্র সন্তানের জন্মদিন পালন করে চলেছেন। বারোতম জন্মদিনেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটল না।
গত শুক্রবার ছিল একমাত্র কন্যা অনুস্মিতার ওরফে মা-বাবার আদরের প্রাপ্তির বারোতম জন্মদিন। ডাক্তার দম্পতির সৌজন্যে এলাকাবাসী একটু অন্যরকম পরিবেশের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল।
সন্তানের জন্মদিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জন্মদিনের সকালে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট ৩৫ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা ছিলেন। রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য অন্যান্যদের সঙ্গে ডাক্তার দম্পতিও রক্তদান করেন। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, রাখী তেওয়ারী, দীপঙ্কর লাহা সহ শহরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার জন্য চারটি বিদ্যালয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেনডার। সেগুলি পেয়ে কিশোরীরা খুব খুশি। বিকালে বাচ্চাদের জন্য একটি অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। থিম ছিল ‘ধোঁয়াহীন’ দীপাবলী অর্থাৎ নিষিদ্ধ বাজী ফাটানো থেকে বিরত থাকা। অপর থিমটি ছিল ‘পৃথিবী বাঁচাও’। বিভিন্ন কারণে আমাদের সাধের পৃথিবী আজ চরম বিপদের মুখে। সেটাই ফুটে ওঠে বাচ্চাদের তুলিতে।
একইসঙ্গে স্থানীয় দু’টি কলেজের সাত জন মেধাবী ছাত্রীর হাতে স্কলারশিপ বাবদ নগদ অর্থ ও একটি করে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে নগদ অর্থ পেয়ে মেয়েগুলি খুব খুশি। প্রাপকদের অন্যতম প্রত্যুষা মিত্র বলল,’আমি বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুরে এসে ভর্তি হয়েছি। এই অর্থ পেয়ে আমার মত অন্যরাও যথেষ্ট উপকৃত হবে ।’ তারা প্রত্যেকেই ডাক্তার দম্পতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ছোট্ট প্রাপ্তিকে শুভেচ্ছা জানায়।
প্রসঙ্গত,চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবার জন্য ডাক্তার দম্পতি ‘উত্তিষ্ঠিত জাগ্রত জাগো নারী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা গড়ে তুলেছেন। লক্ষ্য হলো ধীরে ধীরে গোটা রাজ্য জুড়ে সেবার কাজ ছড়িয়ে দেওয়া। সন্ধ্যার সময় বন্ধু ও আত্মীয়দের মাঝে উপস্থিত ছিল অনুস্মিতা। সাধারণ পোশাকে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি ও নিজের সরল ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে বাচ্চা মেয়েটা হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয়। নিজের হাতে কেক কেটে সবার মুখে তুলে দেয়।
ছোট্ট অনুস্মিতার বক্তব্য,’আমারও লক্ষ্য মা-বাবার দেখানো পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া এবং সবার পাশে দাঁড়ানো। এরজন্য সবার আগে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।’ ছোট্ট মেয়েটার আন্তরিকতা পূর্ণ প্রতিটি শব্দ সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। উদয়নবাবু বললেন,’সবার মাঝে আমাদের সন্তানের জন্মদিন পালন করে একটা আলাদা তৃপ্তি পাই। দামি পার্থিব উপহার সামগ্রীর পরিবর্তে সবার আশীর্বাদ বেশি মূল্যবান।’ একই কথা বললেন কবিতা দেবীও । তার বাড়তি সংযোজন,’আমাদের সন্তানও যেন সবার পাশে দাঁড়ায়।’।