দিব্যেন্দু রায়,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২৭ জানুয়ারী : রিলস্ বানানোর নেশা কেড়ে নিল এক দশম শ্রেণীর ছাত্রের প্রাণ । পরিত্যক্ত ট্রেনের কামড়ার উপরে ওঠে উপরে উঠে রিলস্ বানার সময় হাই টেনশন লাইনের সংযোগে এসে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হলো ওই কিশোরের । ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের কাঁন্দারা রেলস্টেশনে । মৃতের নাম। মৃতের নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী ওরফে দিশান চৌধুরী । তার বাড়ি কেতুগ্রাম থানার খাঁজি গ্রামে । কেতুগ্রামের স্যার আশুতোষ মেমোরিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল ওই কিশোর । একটা সুস্থ সবল প্রাণোচ্ছল কিশোরের এই প্রকার মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকে বিহ্বল গোটা গ্রাম ।
জানা গেছে, দিশান চৌধুরীর বাবার নাম সুজন শেখ । তিনি কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন । মা লাভলি বেগম গৃহবধূ । দম্পতি দুই ছেলে এবং এক মেয়ে ৷ তাদের মধ্যে বড় দিশান । মেজো ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী অষ্টম শ্রেণির ছাত্র । তিন বছরের মেয়ে রুকসানা সুলতানার বয়স ৩ বছর । অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবার । করগেটের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে বসবাস । সুজন শেখের সীমিত আয়ে অতি কষ্টে সংসার চলে ।
জানা গেছে,খাঁজি গ্রামের বাসিন্দা সুজন শেখ (২৩) ও রিপু চৌধুরী হল দিশান চৌধুরীর বন্ধু । সুজন চেন্নাইয়ে কাজ করে । দিন ১০-১৫ আগে সে বাড়ি ফিরেছে । রিপু চৌধুরী এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে । আজ সকালে সুজন জানায় যে তার মোটরসাইকেল মেরামতির জন্য কাঁন্দারা যাবে ৷ খাঁজি গ্রাম থেকে ৫-৭ কিলোমিটার দূরে কাঁন্দরা । এরপর তিনজনে মিলে সেই বাইকে চড়ে কাঁন্দারা যায় । সুজন তার বাইক গ্যারাজে মেরামতি করতে দিয়ে ৩ জন কাঁন্দারা রেলস্টেশনে যায় রিলস্ বানাতে ।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে,কাঁন্দারা রেল স্টেশনের ৩ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়ে রাখা আছে ট্রেনের পরিত্যক্ত চারটি বগি ৷ তিন বন্ধু ওই কোচে রিলস বানানোর জন্য ওঠে । বাকি দুজন কোচের ভেতরে থাকলেও দিশান কোচের উপরে উঠে পড়ে । তার দুই বন্ধু এবং আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা যাত্রীরা সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় তাকে নিষেধ করে । কিন্তু তাদের কথায় কোন কর্ণপাত না করে দিশান কোচের উপরে উঠে রিলস বানাতে শুরু করে । সেই সময় সে হাইটেনশন লাইনে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয় । বিদ্যুতের তারেই সে ঝুলতে থাকে । এদিকে বিকট শব্দ পেয়ে তার দুই বন্ধু বাইরে বেরিয়ে এসে সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পায় ।
জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ ধরে ওই কিশোর তারে ঝুলতে থাকে । বেশ কিছুক্ষণ পরে আসে জিআরপি এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা । শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিশানকে উপর থেকে নামায় । পরে ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া মহাকুমা হাসপাতালে দেহটি পাঠানো হয় । স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আব্দুল উদ্দিন বাদশা বলেন,’প্রায়ই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিলস বানাতে দেখতে পাই । এটা বন্ধ হওয়া দরকার । আজ ওই কিশোরের পরিবারের কি অবস্থা ভাবুন ।’।