জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,০৫ মার্চ :
ওরা নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়ে। ‘যৌনকর্মী’ শব্দ বন্ধনী চোখে পড়লেই তথাকথিত ভদ্র সমাজ একরাশ ঘৃণা উগরে দেয় এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের উপর। ওদের দেখলেই তাচ্ছিল্যের ব্যঙ্গ হাসি বর্ষিত হয়। অথচ আমরা ভুলে যাই ওরাও মানুষ। ওদেরও একটা মন আছে। সন্তানদের জন্য ওদেরও কষ্ট হয়। ওদের বোবা কান্নার পিছনে চাপা পড়ে যায় একরাশ অপ্রকাশিত যন্ত্রণা। আয়ের বিকল্প উৎস না পেয়ে কেউ হয়তো দালাল চক্রের হাতে পড়ে পেটের দায়ে এসেছে এই পেশায়। কেউবা প্রেমিকার দ্বারা প্রতারিত হয়ে শেষ পর্যন্ত এখানে ঠাঁই পেয়েছে। পরে সমাজের মূল স্রোতে এরা কেউ ফিরে যেতে পারেনি।
গবেষণার কাজে কলকাতার সবচেয়ে বড় নিষিদ্ধ পল্লী সোনাগাছিতে যান বিশিষ্ট
জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ডঃ স্মরজিৎ জানা। নিজের চোখে এদের যন্ত্রণা ভরা জীবন দেখে বিচলিত হন। নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের জন্য গড়ে তোলেন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’। ‘যৌনকর্মী’-দের সামাজিক স্বীকৃতি ও বিভিন্ন সমস্যা দূর করার লক্ষ্যে শুরু হয় অসম লড়াই।
“দুর্বার”-এর হাত ধরে প্রথমবারের জন্য কলকাতার বুকে সোনাগাছির বিপরীতে দর্জি পার্কে আয়োজিত হতে চলেছে ‘যৌনকর্মী’ সন্তানদের ‘আমাদের অধিকার, আমাদের দাবী’ পূরণের লক্ষ্যে তিন দিন ব্যাপী প্রথম রাজ্য শিশু মেলা। পরিচালনায় যৌনকর্মী সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা পদাতিক’। ১০ ই মার্চ শুরু হবে এই মেলা, শেষ হবে ১২ ই মার্চ।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, মেলায় প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানে মূলত এরাই অংশগ্রহণ করবে। শহরের বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের উপস্থিতিতে যৌনকর্মীদের অধিকার এবং মানবিক অধিকার নিয়ে সেমিনার হবে, আলোচনা হবে। বাচ্চাদের জন্য থাকবে নাগরদোলা, ঘূর্ণি সহ বিভিন্ন রাইড। এছাড়াও থাকবে ছোট-বড় নানা ‘স্টল’। ইতিমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক বাণিজ্যিক সংস্থার কাছে ‘স্টল’ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তাদের আশা একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে এই মেলাটিকে সফল করার জন্য অনেকেই এগিয়ে আসবে।
সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেকের কাছে আবেদন করে সংগঠনের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক নির্মাল্য কুমার মুখোপাধ্যায় বললেন – এই মেলাটিকে সফল করার জন্য আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। নিজের সন্তানদের ‘মানুষ’ করার জন্য ওরা কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। ওদের সন্তানদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। কেউবা উচ্চশিক্ষিত। সবার সহযোগিতা পেলে ওদের সন্তানরা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম নিতে পারবে।।