এইদিন ওয়েবডেস্ক,কর্ণাটক,১৯ জুলাই : কর্ণাটকের রায়চুর জেলার মাসকি শহরে একটি বড় প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪,০০০ বছর আগের মানুষের বসতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভারত, আমেরিকা এবং কানাডার বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এই এলাকায় খনন করেছে। এই সময়ের মধ্যে সেখানে অনেক প্রাচীন জিনিসপত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এখানে প্রাচীন মানব বসতির প্রমাণ দেয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, মাসকি শহরের কাছে মল্লিকার্জুন মন্দির এবং অঞ্জনেয় স্বামী মন্দিরের কাছে অবস্থিত মল্লিকার্জুন পাহাড়ে এই আবিষ্কার করা হয়েছে। খননকালে বিজ্ঞানীরা মৃৎশিল্প, রান্নার সরঞ্জাম এবং আরও অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছেন। এগুলি ইঙ্গিত দেয় যে এখানে একটি সমৃদ্ধ এবং প্রাণবন্ত বসতি ছিল।
এই দলটি গত তিন মাস ধরে মাসকিতে কাজ করছে। গবেষকরা আরও দেখেছেন যে খ্রিস্টপূর্ব ১১ তম থেকে ১৪ তম শতাব্দী পর্যন্ত এই অঞ্চলে মানুষ বাস করত। এর অর্থ হল মাসকিতে ৪,০০০ বছরের পুরনো সভ্যতার চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ডঃ অ্যান্ড্রু এম. বাউয়ার, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কানাডা) ডঃ পিটার জি. জোহানসন এবং ভারতের শিব নাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমন্ত কাদম্বি। তারা ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (ASI) থেকে অনুমতি নিয়ে মাসকি অঞ্চলে অনুসন্ধান শুরু করেন এবং এখন পর্যন্ত এখানে ২৭১টি সম্ভাব্য প্রাচীন স্থান চিহ্নিত করেছেন। এই আবিষ্কারকে ভারতের ইতিহাস এবং প্রাচীন সভ্যতা বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাসকি শিলালিপি
ব্রিটিশ স্বর্ণ খনি প্রকৌশলী সি বিডন ১৯১৫ সালে কর্ণাটকের মাসকিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিলালিপি খুঁজে পান, যা এই অঞ্চলকে প্রত্নতাত্ত্বিক মানচিত্রে স্থান দেয়। এই শিলালিপিটি মৌর্য সম্রাট অশোকের আমলের এবং একটি গুহার ভিতরে একটি পাথরে খোদাই করা ছিল। এটি মৌর্য যুগের প্রাচীনতম শিলালিপিগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এতে স্পষ্টভাবে সম্রাট অশোকের নাম এবং তার বিখ্যাত উপাধি ‘দেবনপ্রিয়’ (যার অর্থ দেবতাদের প্রিয়) উল্লেখ রয়েছে।
এই আবিষ্কার অশোককে আসলে এই উপাধি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল কিনা তা নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিতর্কের অবসান ঘটায়। এই শিলালিপিটি ব্রাহ্মী লিপি এবং প্রাকৃত ভাষায় লেখা এবং অশোকের অহিংসা এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি নিবেদনকে প্রতিফলিত করে।
এই আবিষ্কার কেবল মাসকির ঐতিহাসিক গুরুত্বই তুলে ধরেনি বরং মৌর্য সাম্রাজ্যের শিলালিপি বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।।