পরকীয় সম্পর্ক ক্রমশ মহামারীর আকার ধারন করছে বিশ্বজুড়ে । নরনারীর উদ্দাম যৌন্যতার জন্য কোথাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটা সুস্থ সুন্দর সংসার । কোথায় শিশুরা হয়ে যাচ্ছে অনাথ । অনেকে ভারতের এই প্রকার সংস্কৃতিকে পশ্চিমি সভ্যতার অন্ধ অনুকরণের কুফল হিসাবে বর্ণনা করেন । কেউ কেউ এটাকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অনীহার জন্য মানুষের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়ের কারন হিসাবে ব্যাখ্যা করেন । তবে কারন যাই হোক না কেন, কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এই অসামাজিক কার্যকলাপ ৷ সম্প্রতি তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদ থেকে এমনই একটা ঘটনা সামনে এসেছে ৷ এক গৃহবধূর পরকীয়া সম্পর্কের কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে একটা সুন্দর সংসার । অনাথ হয়ে গেছে তার ১১ বছরের ছেলে ৷
আসলে,সম্প্রতি হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা অশোক (৪৫) নামে এক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ অশোক একটি বেসরকারি কলেজে কাজ করতেন। পরিবার বলতে ছিল স্ত্রী পূর্ণিমা (৩৬) এবং তাদের ১১ বছরের পুত্রসন্তান ৷ দীর্ঘ ১২ বছর বৈবাহিক জীবন অশোক ও পূর্ণিমার । সংসারের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বাচ্চাদের টিউশন পড়াতেন পূর্ণিমা৷ সুখের সংসার ছিল তাদের ৷ কিন্তু সেই সুখ তাদের বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ।
এদিকে পূর্ণিমার যাতায়াতের পথে একই কলোনির বাসিন্দা যুবক পালেতি মহেশ (২২) যে তার উপর নজর রাখছে সেটা হয়ত প্রথম দিকে খেয়াল করেননি ওই মহিলা । ঘরের জানালা দিয়ে মহেশ অপলক দৃষ্টিতে পূর্ণিমার সৌন্দর্য দেখত ৷ ক্রমশ সে কামনাতুর হয়ে পড়ে । একদিন সে রাস্তায় পূর্ণিমার মুখোমুখি হয় । মুচকি হেসে পূর্ণিমার সঙ্গে দু’চার কথা বলে মহেশ । কিন্তু পোড় খাওয়া নারী পূর্ণিমার চোখ মহেশের গোপন বাসনার কথা ঠিক টের পেয়ে যায় ।
এভাবেই কিছু দিন রাস্তায় পূর্ণিমা-মহেশের কথপোকথন চলতে থাকে ৷ ক্রমে বয়সে ১৪ বছরের ছোট যুবকের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়েন ওই বধূ ৷ বিষয়টি টের পেয়ে যায় মহেশ৷ তারপর একদিন সকালে ছেলে যখন স্কুলে গিয়েছিল সেই সময় হঠাৎ মহিলার ভাড়া বাড়িতে চলে যায় যুবক । পূর্ণিমা তার জন্য চা করে আনেন । হাতে চায়ের পেয়ালা তুলে দিতে গিয়ে মহিলাকে আলুথালু পোশাকে দেখে আর স্থির থাকতে পারেনি যুবক । সে মহিলার হাত দুটো ধরে টেনে নিয়ে যায় শোবার ঘরে । টুঁ শব্দ না করে পূর্ণিমাও তার সঙ্গে ঘরে গিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেন ৷ সেই শুরু তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ।
পূর্ণিমা-মহেশের পরকীয়া সম্পর্ক ভালোই চলছিল মাস খানেক ধরে । কিন্তু সন্দেহ জাগে অশোকের মনে । শেষে একদিন অশোক তার স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জেনে যান৷ ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি পূর্ণিমাকে এই সম্পর্ক থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন । কিন্তু সদ্য যৌবনে পা রাখা মহেশের প্রেমে পাগল পূর্ণিমা তার স্বামীর কোনো কথাকেই গুরুত্ব দেননি । পরিবর্তে প্রেমের পথে কাঁটা স্বামীকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে দেন । অবশেষে এসে যায় অশোকের জীবনের অন্তিম দিন ।
দিনটা ছিল গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বেলা । অশোক কাজ থেকে সদ্য বাড়ি ফিরে এসেছেন । তার ছেলে টিউশন পড়তে গেছে । পূর্ণিমা ঘরের কপাট খুলে দিলে অশোক ভিতরে ঢোকেন । তার আগে থেকেই ঘরে অপেক্ষা করছিল মহেশ ও মহেশের এক বন্ধু সাই । পূর্ণিমা ঘরের দরজা বন্ধ করতেই মহেশ ও সাই অশোকের সামনে আসে । চমকে যান অশোক । কিন্তু তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পূর্ণিমা তার বুক থেকে ওড়নাটা খুলে নিয়ে মহেশের হাতে তুলে দেন । এরপর সেই ওড়না দিয়ে অশোকের গলা পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে মহেশ ও সাই ।
ইতিমধ্যে পূর্ণিমা রটিয়ে দেয় যে তার স্বামী হৃদরোগে মারা গেছেন । অশোকের পরিবারের লোকজন ছুটে আসেন । কিন্তু তারা যখন অশোকের গলায় কালশিটে দাগ দেখতে পান, তখন তাদের সন্দেহ হয় । অশোকের পরিবারই পুলিশকে খবর দেয় । এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে । পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসাররাও মৃতদেহ দেখেই খুন বলে সন্দেহ করে । কিন্তু প্রমান চাই । তাই পুলিশ দেরি না করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় । পাশাপাশি আটক করা হয় পূর্ণিমা,মহেশ ও সাইকে । ইতিমধ্যে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও চলে আসে । তাতে স্পষ্ট বলা হয় যে অশোককে শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে ।
এরপর পুলিশ নিজস্ব কায়দায় আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে । পুলিশের ম্যারাথন জেরায় পূর্ণিমা, মহেশ এবং সাই তাদের অপরাধ কবুল করে । পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালতের নির্দেশে তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে ।।
