শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৩ নভেম্বর : বাবার পরকীয়া সম্পর্কের জেরে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল ৩ মাসের শিশুকন্যাকে । মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে নিজের ছোট্ট কন্যাসন্তানকে হত্যার পর নদীর জলে ভাসিয়ে দিল ঘাতক বাবা । এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে আজ বুধবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পান বয়েরা গ্রামে । পুলিশ ঘাতক বাবা জেসাই মূর্মুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে । তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটির দেহের হদিশ করতে পারেনি পুলিশ ।
জানা গেছে,ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাড়ি জেসাই মূর্মুর । তার স্ত্রীর নাম রাসবেরি হেমরম। দম্পতি খেতমজুরের কাজ করেন । বর্তমানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমন ধান কাটার মরশুম শুরু হয়েছে । ধান কাটার কাজে ঝাড়খণ্ড থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আসতে শুরু করেছে খেতমজুরের দল । জেসাই-রাসবেরিরা প্রতি বছর সাধারণত মন্তেশ্বরের পান বয়েরা গ্রামে ধান কাটার কাজে আসে । তবে এবারে জেসাই এলেও তার স্ত্রী শিশুসন্তান থাকায় আসেননি । তিনি বাড়িতেই ছিলেন । তবে কাজে না এলেও ফোন মারফত রাসবেরি জানতে পারেন যে তার স্বামী সঙ্গে করে রাশমি মারান্ডি নামে অন্য এক মহিলাকে এনেছে এবং তারা স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস করছে । একথা শুনে চরম ক্ষিপ্ত হন রাসবেরি হেমরম । সংসার ভাঙার আশঙ্কায় তিনি শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হন । তিনি বয়েরা গ্রামে আসার পর স্বামীর সঙ্গে একপ্রস্ত অশান্তিও হয় । যদিও পরে সব ঠিকঠাক হয়ে যায় । কিন্তু জেসাই যে মনে মনে একটা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেছে সেটা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি রাসবেরি ।
জানা যায়,আজ ভোরে স্বামীর কাছে শিশুকন্যাকে রেখে শৌচকর্ম সারতে যান রাসবেরি । কিন্তু ফিরে এসে দেখেন স্বামী ও সন্তান কেউ নেই । অনেক খোঁজ করেও তাদের সন্ধান করতে পারেননি ওই আদিবাসী বধূ । তিনি বিষয়টি সঙ্গীসাথী ও মালিককে জানান । তারাও শিশু ও শিশুর বাবার খোঁজ শুরু করেন । তবে তারা জেসাইয়ের হদিশ পেলেও শিশুটির সন্ধান পায়নি । সন্দেহ হওয়ায় সকলে জেসাইকে চেপে ধরে । প্রথমে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে । শেষ পর্যন্ত গ্রামবাসীদের জেরায় নিজের অপরাধ কবুল করে জেসাই । সে জানায় যে মেয়েকে খুন করে খড়ি নদীর জলে ফেলে দিয়েছে । এদিকে একটা দুধের শিশুকে এমন নির্মমভাবে হত্যার কথা শোনার পর গ্রামবাসীরা চরম ক্ষিপ্ত হয়ে জেসাইকে ব্যাপক মারধর শুরু করে । পরে খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে । পরে পুলিশ বাহিনী গিয়ে খড়ি নদীর জলে শিশুর দেহের সন্ধানে তল্লাশি চালায় । তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে ।।