প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ মে : অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারে সাপ,টিকটিকি কিংবা বিছে থাকার অভিযোগ ঘিরে মাঝে মধ্যেই ক্ষোভ বিক্ষোভের মুখে পড়েন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। কখনো কখনো তাদের কপালে শাস্তির খাঁড়াও নেমে আসে। তবে এবার একেবারে উলট পুরান কাণ্ড ঘটলো পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে । ওই কেন্দ্রের কর্মী চৈতালী দাসের তৎপরতায় বিষক্রিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেল দু’বছর বয়সী একটি দুধের শিশু । এই তৎপরতার জন্য এলাকার বাসিন্দারা কুর্নিশ জানিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীকে ।
এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে,অনান্য দিনের মত মঙ্গলবারও খণ্ডঘোষের আড়িন শিশু আলয়ের কর্মী চৈতালী দাস শিশু ও প্রসূতি মায়েদের জন্য খাবার রান্না করেন।সেই খাবার নিতে আসা শিশু ও প্রসূতি মায়েদের টিফিন বাক্স প্রতিবারই পরীক্ষা করে তবেই খাবার দেন চৈতালী। এদিনও তিনি তেমনটাই করছিলেন।দু’বছর বয়সী এক শিশু খাবার নিতে এলে তার টিফিন বাক্স চৈতালী পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন,তাতে রয়েছে বিভিন্ন পোকামাকড় সহ টিকটিকি ও আরশোলার মল। সেইসব দেখেই টিফিন বাক্সে খাবার না দিয়ে থমকে যান চৈতালু । কারণ তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি পোকামাকড়সহ টিকটিকি ও আরশোলার মলযুক্ত খাবার খেলে বিষক্রিয়ায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। পরে শিশুর অভিভাবককে ডেকে এনে সব দেখিয়ে টিফিন বাক্স ভাল করে ধুয়ে তারপর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী চৈতালী ওই শিশুকে খাবার দেন ।
এমন ঘটনার পর চৈতালী দাস বলেন,’যদি এদিন তিনি শিশুটির আনা টিফিন বাক্স পরীক্ষা না করে খাবার দিয়ে দিতেন তাহলে সেই খাবার খেয়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারতো। তখন সব দায় পড়তো আমাদের উপরে। এলাকার সবাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এসে বিক্ষোভ দেখাতেন । আমাদের উপরেই শাস্তির খাড়া নেমে আসতো। যেমনটা কয়েকদি আগেই হয়েছে খণ্ডঘোষের ছাতিমপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। খাবার থেকে টিকটিকি মেলার অভিযোগ ঘিরে বিক্ষোভে উত্তাল হয় ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে । জামালপুর ব্লকের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবারের সাপ থাকা নিয়েও ব্যাপক হৈচৈ পড়ে ।’ এইসবের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদের খাবার দেবার আগে সচেতন থাকার বার্তা দেন চৈতালীদেবী।
খণ্ডঘোষ ব্লকের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার বারিল শর্মা বলেন,’প্রত্যেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদেরই উচিৎ এমন সচেতনতা গ্রহন করা । কেননা অনেকদিন আগে থেকেই দফতর গত ভাবে এই সংক্রান্ত দিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট বলা রয়েছে,অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার রান্না হয়ে যাবার পরে সকল কর্রীরা সেই খাবার প্রথম সেখানকার একজন প্রসূতি মা ,দু’জন গর্ভবতী ও চারজন অভিভাবিকাকে ডেকে এনে ভাল করে নেড়েচেড়ে দেখানোর ।এর পর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকা সেই খাবার প্রসূতি,গর্ভবতী ও অভিভাবিকাদের সামনে নিজেরা খেয়ে দেখিয়ে তাথের সন্মতি নিয়ে বিলির করবেন । এই নির্দেশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলে কোন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীর দিকে কেউ আঙুল তুলতে পারবেন না ।’
আড়িন শিশু আলয় থেকে খাবার নিতে আসা এক শিশুর অভিভাবিকা উষা সাঁই বলেন,’ঘটনা বিষয়টি শোনার পর আমরা নিজেরা কেন্দ্রে গিয়ে সবটাই স্বচোক্ষে দেখলাম। বিষক্রিয়া হলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদেরই সবাই দায়ী করতো।’ অপর অভিভাবিকা প্রিয়া রায় বলেন,’কর্মী চৈতালী দাসের সচেতনতায় ওই শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে রক্ষা পেল । এর জন্য চৈতালীর প্রশংসা করতেই হবে ।’ শিশুদের মায়েদের সচেতন হওয়াও জরুরি বলে প্রিয়া রায় মন্তব্য করেছেন।
খণ্ডঘোষের জেলাপরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলাম বলেন,’রাজ্য সরকারের বদনাম করতে অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রের খাবার নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এইসব করা হচ্ছে কিনা তার তদন্ত হওয়া দরকার ।’পাশাপাশি তিনি খাবার দেবার আগে প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ির কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়িকাদের এইভাবেই সজাগ ও সতর্ক থাকারও বার্তা দেন।।

