এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,২৫ নভেম্বর : প্রায় চার’শ বছরের প্রাচীন মন্দিরের আশপাশে সেবাইতদের বাড়ি । মন্দিরে লাগানো একাধিক তালা । তারই মধ্যে মন্দিরের তালাগুলি ভেঙে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটল বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে রাজা বীর হাম্বীর পারিবারিক দেবতা ঐতিহ্যবাহী সাক্ষী গোপাল মন্দিরে । অবশ্য মন্দিরে চুরির আগে আশপাশের বাড়িগুলির দরজার বাইরের ছিটকিনি লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতিদল । তারপর মন্দিরের প্রনামী বাক্স ছাড়াও রাজা বীর হাম্বীর দেওয়া পায়ের নুপুরসহ লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীদল । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে আসে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ । ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
বিষ্ণুপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে সাক্ষী গোপাল পাড়ায় মল্ল রাজা বীর হাম্বীর এর আমলে তৈরি প্রাচীন সাক্ষী গোপাল মন্দিরটি । মন্দিরের রয়েছে রাধামাধব এর মূর্তি । মূর্তিগুলি সাজানো ছিল সোনারুপোর অলংকার দিয়ে । দেবী রাধার পায়ে পড়ানো ছিল তৎকালীন মল্ল রাজার বীর হাম্বীর দেওয়া নুপুর । গোপালের হাতে ছিল সোনার তৈরি বাঁশি ।
মন্দিরের সেবাইত কালাচাঁদ মহন্ত বলেন, ‘বুধবার রাত্রি ৮ টা নাগাদ পুজো সেরে যথারীতি মন্দিরের তালা লাগিয়ে বাড়ি চলে যাই । বৃহস্পতিবার সকালে দেবতার নিত্যসেবা করতে এসে দেখি মন্দির ৮-৯ টি তালা ভাঙা । ভিতরে ঢুকে দেখতে পাই গোপাল ও রাধারানীকে পড়ানো সমস্ত গহনা উধাও হয়ে গেছে । প্রনামী বাক্স নেই । এরপর বাকি সেবাইতদের ডাকাডাকি করি । কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ির সদর দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো থাকায় কেউ বের হতে পারছিলেন না । আমি গিয়ে খুলে দিলে তবে তাঁরা বাড়ির বাইরে আসেন । গহনার লোভে প্রাচীন মূর্তির ক্ষতি করে দিয়েছে দুষ্কৃতিরা ।’
মন্দির নগরী বলে পরিচত বিষ্ণুপুর শহর । কিন্তু এভাবে বারবার চুরির ঘটায় এলাকার মানুষ রীতিমতো আতঙ্কিত । স্বাভাবতই শহরের নিরাপত্তা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী । সাক্ষী গোপাল চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গৌতম মহন্ত বলেব, ‘মন্দিরের আশেপাশে আমাদের বংশের ৪৫ টি পরিবার রয়েছে । সকলের বাড়ি বাইরে থেকে লক করে দেওয়া হয়েছিল । দুষ্কৃতিরা মন্দিরের বাইরের দিকে তালা ভাঙতে পারেনি । কিন্তু ভিতরের দিকের ৮-৯ টা তালা ভেঙে লুটপাট চালিয়েছে ।’ তিনি বলেন, ‘রাজা বীর হাম্বী আমাদের সেবাইত নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন । তারপর থেকে আমাদের মহন্ত পরিবার মন্দিরের দেখাশোনা করছে । কিন্তু এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি । মনে হয় বড়সড় একটা দল এই ঘটনা ঘটিয়েছে । এই সপ্তাহে মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথা ছিল । মনে হয় দুষ্কৃতিরা তার আগাম খবর পেয়ে গেছে । আমরা এখন চরম আতঙ্কে আছি ।’ তাঁর অভিযোগ, ‘সাক্ষী গোপাল মন্দিরের আশেপাশে হাইমাস্ট আলো লাগানোর জন্য পুরসভার কাছে অনেকবার আবেদন জানিয়েছিলাম । কিন্তু পুরসভা আমাদের কথায় কোনও কর্নপাত করেনি । মন্দিরের আশেপাশে পুলিশের টহলদারিও নেই ।’ এনিয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । পুলিশ জানিয়েছে,ঘটনার তদন্ত চলছে ।।