এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,২১ নভেম্বর : গ্রামের অনান্যদের সঙ্গে জমিতে ধান কাটার কাজ করছিলেন প্রৌঢ়া মা ও তাঁর মেয়ে । সেই সময় পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে দুটি দলছুট হাতি । দলের বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালিয়ে গেলেও ওই প্রৌঢ় দৌড়াতে পারেননি । এই দেখে মেয়ে ছুটে এসে মা’য়ের হাত ধরে টেনে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । ততক্ষণে একটি হাতি এসে মা’কে শুড়ে জড়িয়ে ধরে ফেলে । প্রৌঢ়াকে সজোরে জমিতে আছাড় দেয় । তারপর তাঁকে পা দিয়ে পিষে মারে বুনো হাতিটি । রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার বুড়ি আঙ্গারিয়া গ্রামে । মৃতার নাম লক্ষ্মী সোরেন(৫৬) । চোখের সামনে মায়ের ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেখে কার্যত বাকরুদ্ধ মেয়ে । এদিকে ঘটনার পর ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা বিষ্ণুপুর-সোনামুখী সড়কপথ অবরোধ শুরু করেন । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী । আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব । শেষে তাঁরা গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে অবরোধ তোলেন ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,বুড়ি আঙ্গারিয়া গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় বাড়ি লক্ষ্মী সোরেনের । এদিন সকালে গ্রামের এক কৃষকের জমিতে ধান কাটার কাজ করতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীদেবী । সঙ্গে ছিলেন তাঁর তরুনী মেয়ে । গ্রামবাসী সহদেব রায় বলেন, ‘মা ও মেয়ের জমির এক দিকে ধান কাটায় মগ্ন ছিলেন । আশেপাশে আরও কিছু জনমজুর ধান কাটছিলেন । সেই সময় কখন যে দুটো হাতি জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে চলে এসে সেটা তাঁরা খেয়াল করেনি । বাকিদের নজরে পড়ে গেলে ছুটে পালায় । তাদের চিৎকার শুনে বিষয়টি বুঝতে পেরে লক্ষ্মীদেবীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁর মেয়ে । কিন্তু তাঁরা হাতির মুখোমুখি পড়ে যান ৷ হাতিটি শুড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে ফেলে লক্ষ্মীদেবীকে । তুলে জমিতে আছাড় দেয় । তারপর তাঁকে পা দিয়ে জমির কাদার মধ্যে পুঁতে দেয় হাতিটি ।’
জানা গেছে,আশপাশের লোকজনের চিৎকারে হাতি দুটি পালিয়ে গেলে লক্ষ্মী সোরেনকে কাদা থেকে বের করে চিকিৎসার জন্য সোনামুখী গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা । কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । পরে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ ।
এই ঘটনার পর বনদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা । স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সোনামুখী জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতির দল । ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের । অথচ লোকালয় থেকে হাতির দলকে সরাতে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপই নিচ্ছে না বনদপ্তর । ঘটনার পর ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা মৃতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও অবিলম্বে হাতির দলকে সরানোর দাবিতে সড়কপথ অবরোধ করেন ।
সোনামূখী ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মৃতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে । সোমবারের মধ্যে পরিবার ক্ষতিপূরণের চেক পেয়ে যাবেন ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘দুটো দলছুট হাতি রয়ে গেছে । তাদের সরানোর জন্য হুলাপার্টির দল এসে গেছে । আশা করছি রাতের মধ্যেই হাতি দুটিকে সরানো সম্ভব হবে ।’।