প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ নভেম্বর : গৃহস্থের বাড়িতে বালি বোঝাই লরি উল্টে গিয়ে একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি বালি কারবারীদের।এক বছর আগে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার মুইদিপুর গ্রামে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ফের একই জায়গায় শুক্রবার রাতে ঘটার উপক্রম হয় । যা নিয়ে শনিবার সকাল থেকে ব্যাপক ক্ষোভ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে জামাহপুরের জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েতের মুইদির গ্রামে । ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা এদিন তাঁদের গ্রামের রাস্পা দিয়ে বালির লরি যাতায়াত বন্ধ করেদেন ।পাশাপাশি তাঁরা বালি ঘাট থেকেও কোন বালি বোঝাই লরিকে রাস্তায় উঠতে না দিয়ে বালি খাদান বন্ধের দাবিতে সরব হন। ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও এলাকাবাসীর রোষ আঁচ করে তাঁরা এদিন শুধুমাত্র নীরব দর্শকের মতোই মুইদিপুর গ্রামের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকেন ।
মুইদিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজু বাউরি ও খোকন বাউরি এদিন বলেন , তাঁদের গ্রামে বাঁধের রাস্তার দুই ধারে বহু পরিবার বসবাস করে ।গ্রামের অনতিদূরে ১ কিমির মধ্যে রয়েছে দুটি বালি খাদান।গত বছর ৫ নভেম্বর গভীর রাতে ওই খাদান থেকে অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে নিয়ে একটি লরি তাঁদের গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল ।যাওয়ার সময়ে ওই লরিটি বাঁধের রাস্তার ধারের এক মাটির বাড়িতে উল্টে পড়ে। ওইদিন বালির নিচে চাপা পড়ে ঘরের ভিতরেই মারাযান ওই বাড়ির বধূ সন্ধ্যা বাউরি (৩২)এবং তাঁর নাবালক ছেলে মেয়ে রাহুল বাউরি (১২) ও রিঙ্কু বাউরি (১৫)।বাড়িতে না থাকায় ওই দিন প্রাণে বেঁচে যান সন্ধ্যার স্বামী প্রশান্ত বাউরি ।সেই ঘটনার পর এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল মুইদিপুর গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতীতে ওভারলোড বালির লরি যাতায়াত করতে দেওয়া হবে না।কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা কথা রাখেন নি । রাজু বাউরি জানান , এই বছর একই জায়গায় বালি খাদান চালু হওয়ার পরথেকে দিনে ও রাতে শয়ে শয়ে ওভারলোড বালি বোঝাই লরি বাঁধের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে । পথে থাকা পুলিশ সব দেখেও কোন অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেয় না । রাজু বাউরি ও খোকন বাউরি বলেন,’শুক্রবার গভীর রাতে মূল রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া ওভারলোভ বালি বোঝাই একটি লরি তাঁদের বাড়িতে উল্টে পড়ার উপক্রম হয় । কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে লরিটি উল্টে না যাওয়ায় তাঁরা দুই পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ।এই ঘটনার জন্য গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে এদিন বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালির লরি যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে ।
গ্রামের অপর এক বধূ শ্যামলী বাইরি বলেন, বালি কারবারীরা বালির ব্যবসা করে মুনাফা লুটার জন্য গরিব মানুষের জীবন শেষ করে দিতে চাইছে । অথচ প্রশাসন ও নির্বিকার হয়ে রয়েছে । এদিনের প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল থাকা স্থানীয় বাসিন্দা হিরু শেখ, সুভাষ মালিক বলেন ,তাঁদের এলাকায় থাকা দুটি বালি খাদানের মালিকই কোন নিয়মকানুন মানছেন না ।খাদান গুলি থেকে ৫০০ সিএফটি বালির চালান প্রায় ৯০০ সিএফটি বালি লোড করে লরি গুলি রাস্তায় উঠছে।খাদানে চালকদের মদ খাওয়াতেও কোন নিষেধ নেই।ওই ওভারলোড বালির লরি খাদান থেকে উঠে মুইদিপুর ,রেশেলাতপুর গ্রামের বাঁধের রাস্তা দিয়ে গিয়ে হুগলীর চাঁপাডাঙ্গর দিকে চলে যায়। এই পথে তিন চারটি স্কুল রয়েছে । ওভারলোড বালি বোঝাই লরি গুলি যে ভাবে দ্রুত গতীতে বাঁধের রাস্তা দিয়ে যায় তার জেরে যেকোন সময়ে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারাতে পারে । মুইদিপুর গ্রামের দুটি পরিবার শুক্রবার গভীর রাতে ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছেন বলে হিরু শেখ দাবি করেছেন ।
এলাকাবাসীর আনা এইসব অভিযোগ প্রসঙ্গে
বালি খাদানের মালিকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন । একই সঙ্গে দাবি করেন তাঁদের খাদানে আসা কোন লরিতে ওভার লোড করা হয় না । স্থানীয় জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আরিফা মণ্ডল এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মুইদিপুর ও রেসেলাতপুরে বাঁধের রাস্তা দিয়ে বালি বোঝাই লরি নিয়ে যাওয়ার জন্য
তাঁদের পঞ্চায়েত বালি খাদান মালিকদের এনওসি দেয় নি । তা সত্ত্বেও কিভাবে ওই রাস্তা দিয়ে বালির লরি যাতায়াত করছে তার উত্তর প্রশাসনের কর্তারা দিতে পারবেন বলে প্রধান জানান ।
জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার
বলেন,’মুইদিপুর গ্রামের লোকজন আমায় কিছু জানায়নি । তবে কি ঘটনা ঘটেছে সেই বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন ।পুলিশের কাছেও তিনি ঘটনা বিষয়ে জানবেন।’ এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ ) আমিনুল ইসলাম খাঁন জানিয়েছেন,’তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি । কোথাও ওভার লোড বালির লরি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না । ওই লরিটিতেও ই- চালান ছিল।’।