এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,১৬ নভেম্বর : দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে তোলাবাজি,কাটমানি আদায়ের প্রবণতা রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তা সত্ত্বেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না এই প্রবণতা । ফের শাসক দলের এক নেতার তোলাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে এল পূর্ব বর্ধমান জেলায় । এবার বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মানের জন্য দলেরই এক সমর্থককে হুমকি দিয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগ উঠল জেলার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । বর্ধমান সদর থানার অন্তর্গত রায়ান গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মানস ভট্টাচার্য নামে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এনিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন একই গ্রামের বাসিন্দা টুটুল মাঝিল্যা নামে এক যুবক । তাঁর অভিযোগ, ওই নেতার দাবি মত তোলা দিতে না পারায় তাঁর বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করতে দিচ্ছেন না মানস ভট্টাচার্য । এমনকি তিনি টাকা আদায়ের জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা লাগানোরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । দিন ছয়েক আগে এনিয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসানের কাছেও ঘটনার কথা বিস্তারিতভাবে জানান টুটুল মাঝিল্যা । যদিও এযাবৎ কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ । এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই তৃণমূল সমর্থক ।
ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ পেলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হবে বলে তিনি জানান । তবে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘কেউ তোলাবাজি করলে দল তাকে রেয়াত করবে না ।অভিযোগ সত্যি প্রমানিত হলে দল ব্যবস্থা নেবে ।কেউ দলের উর্দ্ধে নয় ।’
জানা গেছে,মানস ভট্টাচার্য নামে ওই তৃণমূল নেতা বর্ধমান-১ নম্বর ব্লকের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদে রয়েছেন । পাশাপাশি তিনি বর্ধমান ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষও ।
সুত্রের খবর,মানস ভট্টাচার্য নামে ওই নেতার এতটাই প্রভাব প্রতিপত্তি যে তিনি স্থানীয় বিধায়কসহ অনান্য নেতাদের তেমন পাত্তাই দেন না । এলাকার বাসিন্দারাও তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না । দাপটের সঙ্গে এলাকায় তিনি নিজের কর্তৃত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন । এমনকি দলের অভ্যন্তরেও তাঁকে নিয়ে কানাঘুষো চললেও কেউই মানসবাবুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননা বলে খবর ।
গত ১১ নভেম্বর বর্ধমান সদর থানায় তৃণমূল নেতা মানস ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন একই গ্রামের বাসিন্দা টুটুল মাঝিল্যা নামে এক যুবক । জানা গেছে,টুটুলবাবু সরকারি পলিটেকনিক কলেজে শিক্ষকতা করে । কর্মসুত্রে তাঁকে মূর্শিদাবাদে থাকতে হয় । রায়েনে পৈতৃক বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা,স্ত্রী ও ৪ বছরের একটি পুত্রসন্তান ।
টুটুলবাবু অভিযোগ, ‘মানসবাবুর পরামর্শ মতই সম্প্রতি বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করেছিলাম । কিন্তু প্রাচীর নির্মানের জন্য নির্মান সামগ্রী নামাতেই মানসবাবু অকারন আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমি অত টাকা ওনাকে দিতে পারিনি । ২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাচীর নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করতে দেওয়ার জন্য ওনার কাছে অনুরোধ করেছিলাম । কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার প্রাচীর সম্পূর্ণ করতে দেওয়া হয়নি । উনি সাফ জানিয়ে দেন ৫০ হাজার টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করতে দেবেন না ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘এদিকে পরেশ মাঝিল্যা নামে আমার এক প্রতিবেশী বিডিএর অনুমতি ছাড়াই বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করছেন । এনিয়ে আমি জেলাশাসক, মহকুমা শাসক,এসপি,বিডিও সবাইকে জানিয়েছি । কিন্তু প্রশাসন কোনও ব্যাবস্থাই নেয়নি । সরকারি নিয়মে ৩ ফুট ছেড়ে বাড়ি করার কথা হলেও উনি দেড় ফুট ছাড় দিয়ে বাড়ি করছেন ।
মানসবাবুর ভয়ে তা মেনে নিতে বাধ্য হই । এমনি পরেশবাবুর বাড়ির ভিতরে আমার বেশ কিছুটা জায়গা ঢুকে আছে । অথচ মানসবাবুকে এনিয়ে বলা সত্ত্বেও তা নিয়ে তিনি কোনও উচ্চবাচ্চই করছেন না । আমার সঙ্গে উনি চুড়ান্ত নোংরামি করছেন । টাকা না পেয়ে আমার সীমানা প্রাচীর নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করতে দিচ্ছেন । এদিকে নির্মান সামগ্রী সব পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ।’
জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর এনিয়ে বর্ধমান সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন টুটুল মাঝিল্যা । তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান,মানস ভট্টাচার্যের দাবিমত টাকা দিতে না পারায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মানসবাবু । পাশাপাশি প্রাণহানীরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারী যুবক ।এই বিষয়ে জানতে মানস ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি ফোনে কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি ।
এদিকে তৃণমূলের এক নেতার তোলাবাজির ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে । যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি । অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে । মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে, যদি কেউ দলের নাম করে টাকা তোলে তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দিতে হবে ।’ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার পর ব্যাবস্থা নেওয়ারও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ।।