প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ নভেম্বর :
পৌরাণিক মতে নারদাদি মুনিগন দেবী জগদ্ধাত্রীর নিত্যসেবায় নিয়োজিত থাকেন । সেই কারনে দেবীর দুই সেবক নারদমুনি ও ব্যাসদেবেরও পূজো হয়ে আসছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে । প্রায় দেড়শ বছর ধরে চট্টোপাধ্যায় পরিবার আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয় এই ষোড়শোপচার মেনে জগদ্ধাত্রী পূজো করে আসছে ।আজও তার অন্যথা হয় না । তবে পূর্বে নবমীর দিন ছাগবলির প্রথা থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । তার পরিবর্তে ছাচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয় । পারিবারিক পূজো হলেও গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পূজোয় অংশগ্রহন করে । শনিবার জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রীর পূজো ঘিরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম ।
এলাকার বনেদী পরিবারগুলির মধ্যে অন্যতম জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবার । পরিবারের সদস্যদের সিংহভাগ সদস্য কর্মসুত্রে বাইরে থাকেন । তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার ,কেউ উকিল আবার কেউ সরকারী উচ্চ পদে কর্মরত । তবে প্রতিবছর এই সময়ে কূলদেবী জগদ্ধাত্রীর পূজোতে সকলে জামালপুরের কালীতলা পাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে এসে জড়ো হন । সাবেকি বসতবাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে কুলদেবীর মন্দির । মন্দির জুড়ে রয়েছে শিল্প নৈপুণ্যতার ছোঁয়া । বিশেষত্ব রয়েছে প্রতিমাতেও । এক চালার কাঠামোর মধ্যে থাকেন চতুর্ভুজা দেবী জগদ্ধাত্রী । তাঁর এক পাশে মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব । অন্য পাশে থাকেন নারদ মুনি ।
পরিবারের সদস্য দিলীপ চট্টোপাধ্যায়,সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়,রুনা চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘পৌরাণিক মত অনুযায়ী ব্যাসদেব ও নারদ মুনিকে দেবীর সেবক হিসাবেই মনে করা হয় । জগদ্ধাত্রীর পুজোর মন্ত্রেও নারদমুনি ও ব্যাসদেবের কথা উল্লেখ রয়েছে । পুরনো সেই রীতি মেনে এখনও আমাদের জগদ্ধাত্রী পূজো হয় । তবে মানবিক কারনে ছাগবলি বন্ধ করে ছাঁচি কুমড়া বলি দেওয়া শুরু করা হয়েছে । এছাড়া দশমীর পর পুরনো রীতি মেনে দেবীকে দামোদর নদে নিরঞ্জন করা হয় ।’ এদিন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পূজো উপলক্ষে অন্নভোগের আয়োজন করা হয়েছিল পারিবারিক মন্দির প্রাঙ্গনে । গ্রামের বহু মানুষকে প্রসাদ গ্রহন করতে দেখা গেল ।।