প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ নভেম্বর : বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে ধান জমিতে দাপিয়ে বেড়ানোর পর বৃহস্পতিবার ভেরে রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানে হানা দিল হাতির দল ।সেই দলে দাঁতাল ও বাচ্চা হাতি মিলিয়ে ৪৮ টি হাতি থাকে। দামোদর নদ পেরিয়ে হাতির দলটি এদিধ প্রথম ঢুকে পড়ে লোকালয় সংলগ্ন গলসির ধান খেতে।পরে সেখান থেকে হাতির দলটি আউশগ্রাম অভিমুখে যাওয়া শুরু করে ।পথে গলসির এক বাসিন্দাকে জখম করে দিয়ে হাতির দলটি আউশগ্রামের নওয়াদা ও বিল্বগ্রাম সহ বেশ কিছু এলাকার ধান খেত চষে বেড়িয়ে ফসল তছনছ করা শুরু করে দেয়। সেই খবর পেয়ে জেলার বন আধিকারিক নিশা গোস্বামী সহ অন্য বনকর্মীরা আউশগ্রামে পৌছান । বন কর্মীরা মাইকিং করে নওয়াদা ও বিল্বগ্রাম এলাকার মানুষজনকে সচেতন করার পাশাপাশি ’ড্রোনের’ মাধ্যমে হাতির গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে যান। একই সঙ্গে চলে হাতির দলটিকে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ফেরৎ পাঠানোর প্রচেষ্টা ।
গলসির শিড়রাই গ্রমের বাসিন্দা শেখ রবিউল হক,নবীন সাহা প্রমুখরা জানিয়েছেন,এদিন ভোরে দামোদর পেরিয়ে প্রায় ৪৭-৪৮টির মতো হাতির একটি দল গলসির পোতনা হয়ে সিংপুরে ঢুকে পড়ে । সেখানকার বিঘার পর বিঘা জমির ধান গাছ খেয়ে ও মাড়িয়ে হাতিতে নষ্ট করেদেয়।এমনটা দেখে সেখানকার চাষিরা দলবদ্ধ ভাবে জোর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন।গলসি থানার পুলিশ ও বনদপ্তরের কর্মীরাও সেখানে হাতির দলটির গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে যান। এরপর সকালে হাতির দলটি সিংপুর গ্রাম ছেড়ে গলসির কাশীপুর,শিল্লা,শিড়রা গ্রামের বিস্তির্ণ জমির ধানগাছ মাড়িয়ে এসে স্থানীয় বনসুজাপুর, উচ্চগ্রাম ও কুতরুকি এলাকা হয় খড়ি নদির কাছে আসে পৌছায় । তারপর খড়ি নদি পেরিয়ে হাতির দলটি আউসগ্রামের দিকে চলে যায় ।
তারই মধ্যে গলসির শিড়রাই গ্রামের বাসিন্দা সেখ সিরাজুল হক ব্যবসার কাজে বাইকে চেপে রাইপুর যাওয়ার সময়ে হাতির দলের সামনে পড়ে যান ।হাতির আক্রমণে তিনি মারাত্মক জখম হন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে গলসির পুরসা হাসপাতালে নিয়েযান । শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাঁকে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন । এছাড়াও গলসির চাষিরা জানিয়েছেন , গলসির বিস্তির্ণ এলাকার পাকা ধানজমি সহ অন্য ফসলের প্রভূত ক্ষতি করে দিয়ে গেছে হাতির দল ।সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করলে সর্বসান্ত হয়ে যাবেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন । গলসি ছেড়ে বেরিয়ে আসা হাতির দলটি এদিন বেলা আনুমানিক ৮ টা নাগাদ আউসগ্রামের
সর গ্রামে প্রথম ঢোকে।একসঙ্গে এত বিশাল সংখ্যক হাতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সর গ্রামের বাসিন্দারা । চোখের সামনেই তাঁরা হাতিকে তাঁদের জমির ফসল নষ্ট করতে দেখে হতাশ হয়ে পড়েন । গ্রমে হাতি ঢোকার খবর পেয়ে আউসগ্রাম থানার পুলিশ সর গ্রামে পৌছায় ।কিন্তু কারুরই সাধ্য হয়না হাতির দলটিকে গ্রাম থেকে তাড়ানোর। নিজেদের মর্জি মতোই হাতি দলটি এরপর সর গ্রামথেকে বেরিয়ে পাশাপাশি মালিকপাড়া,ভোতা,
দেয়াশা, আলিগ্রাম ও বিল্বগ্রাম এলাকার জমির ধানগাছ খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে নওয়াদা এলাকার মাঠে গিয়ে জড়ো হয় ।
বেলায় সেখানেই পৌছে যান জেলার বন আধিকারিক নিশা গোস্বামী , রাজ্যের অতিরিক্ত প্রধান মূখ্য বনপাল কল্যান দাস সহ দুই বর্ধমান , বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার প্রচুর বনকর্মী । দুপুরের মধ্যে বাঁকুড়া থেকে হুল্লা পার্টির সদস্যরা আউসগ্রামের নওয়াদায় পৌছে যান । বন কর্মীরা সবাই মিলে প্রচেষ্টা চালিয়ে দিনের আলোয় হাতির দলটিকে নওয়াদার মাঠেই আটকে রাখতে সক্ষম হন । সেখানে ড্রোনের মাধ্যমেও হাতির দলটির গতিবিধির উপর নজরদারি চালান বন আধিকারিকরা । এলাকার মানুষজন হাতির দলটিকে যাতে উত্তক্ত না করে সেই বিষয়ে মাইকে অহরহ প্রচার চালিয়ে যান বন কর্মীরা ।
জেলার বন আধিকারিক নিশা গোস্বামীও হাতির দলটির গতিবিধির উপর সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেন। তিনি বলেন ,হাতির দলটি বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকেই চলে এসেছে । বাঁকুড়ার জঙ্গলেই হাতির দল টিকে ফেরৎ পাঠানোর প্রচেষ্টা চলছে । হাতির হানায় আউসগ্রামের বিস্তির্ণ এলাকার জমির ফসলের খতি হয়ে যাওয়া নিয়ে বন আধিকারিকের কাছে সরব হন সেখানকার চাষিরা । তাঁরা জেলা বন আধিকারিকের কাছে ফসলের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দাবি জানান।
প্রধান মুখ্য বনপাল কল্যান দাস জানিয়েছেন,
‘দলটিতে ৪৮ টির মত হাতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । দলে বাচ্চা হাতিও দেখা গিয়েছে । তিনি বলেন, বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য সবার আগে দরকার হাতির দলটিকে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ফেরৎ পাঠানো। তার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।দুই বর্ধমান,বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলার বনকর্মীরাও নওয়াদায় হাজির হয়েছেন । হাতি তাড়ানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষিত বাঁকুড়ার হুল্লা পার্টিকেও ডাকা হয়েছে । সন্ধ্যা নামলে সেই কাজ শুরু করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । একই সঙ্গে
প্রধান মুখ্য বন আধিকার গলসি ও আউসগ্রামের চাষিদের আশ্বস্ত করে বলেছেন,ফসলের ক্ষতি হওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই । চাষিরা ফসলের ক্ষতিপূর্ণ পেয়ে যাবেন ।’।