প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ নভেম্বর : পুলিশের মতো খাকি পোষাক ওরা পড়ে না । ওদের ইউনিফর্ম হল নীল প্যান্ট আর আকাশী জামা। তাতে আর কি যায় আসে । অপরাধের ঘটনার তদন্তে ওদের আগ্রহও কম নেই। সেই আগ্রহ ও অনুসন্ধানী চোখ দিয়েই তিন দিন লাগাতার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে যায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলেন্টিয়ার কবির মল্লিক । তাঁদের অনুসন্ধানী চোখে ধরা পড়ে যাত্রীবাহী সন্দেহজনক গাড়ি ।
সেই কথা ওই ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার জেলা পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের জানায়।তাঁদের দেখানো জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোল ট্যাক্স অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত চালিয়ে যান তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা । আর তাতেই মেলে সাফল্য । ধরা পড়ে খুনের ঘটনায় জড়িত সুপারি কিলার সহ দু’জন । বাকি অভিযুক্তদের ধরা পড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।অপরাধের ঘটনার তদন্তে ওই ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারের একাগ্রতার প্রশংসা করেছেন পুলিশ কর্তারা। ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারকে পুরস্কৃত করার বিষয়েও শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন , “ওই ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ার তদন্তে আমাদের সহযোগিতা করেছে।তাঁরা গোপনে অনেক তথ্য জোগাড় করেছে। আমাদের মহকুমা থেকে তো বটেই জেলা পুলিশও যাতে ওই দু’জনকে পুরস্কার দেয় সেই বিষয়ে আবেদন জানানো হবে ।’
পুলিশ জানিয়েছে,গত ২২ অক্টোবর কলকাতা থেকে রায়নার দেরিয়াপুরে পৈতৃক বাড়িতে বেড়াতে এসে খুন হন বড়বাজারের ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডল। খুনিরা সেদিন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । তার পর থেকেই খুনের ঘটনায় জড়িতদের ধরার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালানো শুরু করেন তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা। খুনের ঘটনার সূত্র খোঁজার জন্য পুলিশ কর্তারা জামালপুর থানার ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলেন্টিয়ার কবির মল্লিককে কাজে লাগান । তাঁরা ঘটনার পরদিন থেকে দিনরাত এককরে জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু, জানকুলি , মশাগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে খতিয়ে দেখে। ফুটেজে সন্দেহ জনক গাড়ির অস্তিত্ব মেলার পর তার ছবি তাঁরা পুলিশ কর্তাদের পাঠায় । ফুটেজে ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলের গাড়ি রায়না যাবার হদিশ যেমন মেলে, তেমনি এইটি সন্দেহ জনক চারচাকা গাড়ির হদিশও মেলে। চারচাকা গাড়িটির আগে থাকা দামি বাইটি ইন্ডিকেটার জ্বালিয়ে যাচ্ছিল । তারই পিছন পিছন আসা চারাচাকা গাড়িটিও একই পথে ইন্ডিকেটার জ্বালিয়ে এসে টোল ট্যাক্স অফিসের সামনে দাঁড়ায় । ওই গাড়িটির হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর টোলের সামনে দাঁড়ানোটা ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারের কাছে অদ্ভুত ঠেকে। তাঁরা সেটি তদন্তকারি পুলিশ কর্তাদের জানায় । ঘটনার দিন গভীর রাতে ওই গাড়িটির ডানকুনি দিয়েও যাওয়ার ছবিও সিসি ক্যামেরায় পান পুলিশ কর্তারা। এই ছবিই তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের অাঁততায়ীদের কাছে পেছে দেয় ।
ভিলেজ পুলিশ অভিজিৎ দাস ও সিভিক ভলেন্টিয়ার কবির মল্লিক এদিন বলেন ,”উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তারা তাঁদের যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা তাঁরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন । অপরাধী ধরা পড়ায় পুলিশ কর্তারা তাঁদের কাজের প্রশংসা করেছেন ।’ অপরাধের ঘটনার তদন্তমূলক এই কাজ করে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল বলে তাঁরা জানিয়েছেন ।।