একদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২১ অক্টোবর : দূর্গাপূজো মন্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে কেউ বা কারা কোরান রেখে দিয়ে যায় । তারপর বিগত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে দগ্ধ হতে হচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের । অবশেষে পূজো মন্ডপে কোরান রাখার ঘটনার মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হল বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজের সুত্র ধরে মূল অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন নামে বছর ৩৫-এর এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়েছে । ফুটেজে দেখা গেছে ইকবাল মসজিদ থেকে একটি কোরানের কপি তুলে নিয়ে দূর্গাপূজো মন্ডপের দিকে যাচ্ছে । তারপর চুপি চুপি সেটি হনুমান মূর্তির কোলের উপর রেখে দিয়ে সে পালিয়ে আসে । পূজামণ্ডপের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ইকবালকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কুমিল্লার পুলিশ । পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে ।
স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে খবর, কুমিল্লার সুজানগর এলাকায় বাসিন্দা পেশায় মাছ বিক্রেতা নুর আহমেদ আলমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ইকবাল হোসেন । ঘটনাটি ঘটে ১৩ অক্টোবর রাতে নানুয়া দিঘির পাড়ের একটি পূজো মন্ডপে ৷ সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে,সে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে একটি বই হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসে ৷ এরপর তাকে সোজা নানুয়ারদিঘির মণ্ডপের দিকে হাঁটতে দেখা যায় । কিছুক্ষণ পরই প্যান্ডেলের হনুমানের হাতে থাকা গদাটি নিয়ে বেরিয়ে আসে ইকবাল । পরে ইকরাম হোসেন নামে অন্য এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে মণ্ডপে কোরান পাওয়ার বিষয়টি জানান । কল পাওয়ার পরই কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আনোয়ারুল আজিম সাদা পোশাকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন । ঠিক সেই সময়েই ফয়েজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে যান ও ওসির পরিচয় ফাঁস করে দেন । আর এই ঘটনার পরই সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি, মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটতে শুরু করে বলে জানায় পুলিশ । পরে ফয়েজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে । বর্তমানে সে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে । পুলিশ জানায়,ইকরাম হোসেন ওই রাতে পূজামণ্ডপের কাছেই ছিল । সেই সময় তাকেও গদা হাতে ঘুরতে দেখা যায় ।
এদিকে ধৃত ইকবাল হোসেনের মা আমেনা বেগম দাবি করেছেন,তাঁর বড় ছেলে বিগত ১০ বছর ধরে নাকি মানসিক সমস্যায় ভুগছে । এমনকি সে এক সময় মাদকাসক্তও হয়ে পড়েছিল বলে তাঁর দাবি । পুলিশও ইকবালকে ‘ভবঘুরে ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছে । তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ । এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ইকবাল রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো লোক । তার মানসিক অবস্থাও ভালো নয়। তাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি । পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করছে বলে তিনি জানান ।
স্বভাবতই বাংলাদেশের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ । জানা গেছে, এদিকে ‘ইসকন’ ও ‘বাংলাদেশ হিন্দু কমিউনিটি কাউন্সিলের’ ট্যুইটার হ্যান্ডেলও সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে । এনিয়ে প্রতিবাদও করেছে ইসকন কর্তৃপক্ষ । তাই সংখ্যালঘুদের প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।।