এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৬ অক্টোবর : সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দূর্গাপূজো মন্ডপে হামলার পর এবার হিন্দু মন্দিরগুলোকে নিশানা করতে শুরু করল বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা । শুক্রবার নোয়াখালির ইসকন মন্দিরে হামলা চালায় বেশ কিছু উন্মত্ত লোকজন । মন্দিরে ভাঙচুরের পাশাপাশি ইসকনের শিষ্যদের পূজ্য শ্রী প্রভূপাদের মূর্তিতে অগ্নিসংযোগ করা হয় । ব্যাপক মারধর করা হয় আশ্রমিকদের । অসমর্থিত সুত্রের খবর, হামলায় জতন সাহা (Jatan Saha) নামে ইসকনের এক শিষ্যের মৃত্যু হয়েছে । পরে পার্থ দাস (Partha Das) নামে আরও এক ভক্তের মৃতদেহ ইসকন মন্দির সংলগ্ন একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে খবর । বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর বলে জানা গেছে ।
এদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দূর্গাপূজো মন্ডপ ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে । নোয়াখালির একটি পূজো মন্ডপ ভাঙচুরের ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে বাংলাদেশি হিন্দু ইউনিটি কাউন্সিলের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে । ভিডিওতে দেখা গেছে কিভাবে কট্টরপন্থীরা দূর্গাপূজো মন্ডপে ভাঙচুর চালাচ্ছে । বর্তমানে দেশ জুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে ।
শুক্রবার ইসকনের তরফ থেকে কিছু ভয়াবহ ছবি ট্যুইট করা হয় । ছবিতে দেখা গেছে হামলায় আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন আশ্রমের তরুন সন্ন্যাসীরা । এছাড়া মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কিছু ছবিও শেয়ার করা হয়েছে । এই ছবিগুলিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিভাবে হিংস্র জনতা মন্দিরের ক্ষতি করেছে । ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পূন্যার্থীদের ব্যাপক মারধর করা হয় । হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ইসকন কর্তৃপক্ষ ।
তার আগে বৃহস্পতিবার হাবিবগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । স্থানীয় পুলিশ সুত্রে খবর, তথাকথিত ইসলাম অবমাননার প্রতিবাদে ওই দিন মাদ্রাসার ছাত্ররা মিলে একটি মিছিল বের করেছিল । মিছিলটি একটি দূর্গাপূজো মন্ডপের কাছে আসতেই মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে পূজো কমিটির সদস্যদের মধ্যে বচসা থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় । সংঘর্ষে ২০ জন জখম হয় । শেষে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ।
প্রসঙ্গত,ঘটনার সুত্রপাত হয় বুধবার ভোর রাতে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির পাড়ের একটি পূজো মন্ডপে । মন্ডপ পাহাড়ার যারা ছিলেন তাঁরা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । সেই সময় কেউ বা কারা পবিত্র কোরানের একটি কপি চুপি চুপি মন্ডপে হনুমান মূর্তির পায়ের কাছে রেখে তার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেয় । সেই পোস্ট ভাইর্যাল হলে দেশ জুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে । কট্টরপন্থীরা একজোট হয়ে একের পর এক দূর্গাপূজো মন্ডপে চড়াও হয়ে মন্ডপ ও মূর্তি ভাঙচুর চালায় । হিংসার ৪ জন মানুষের মৃত্যু হয় । অবস্থা এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে বাংলাদেশের ২২ জেলায় সেনা মোতায়েন করতে হয় । জানা গেছে, নানুয়া দীঘির পাড়ের ওই পূজো মন্ডপের ঘটনার পর ফৈয়জ আহমেদ(৪০) নামে এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে কুমিল্লা পুলিশ । পুলিশের সন্দেহ,ওই ব্যক্তিই হনুমান মূর্তির পায়ের তলায় কোরান রাখার পর ছবি তুলে পরে তা ফেসবুকে পোস্ট করেছে ।
এদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্গাপূজো উপলক্ষে ঢাকার ঢাকেশ্বরী রাষ্ট্রীয় মন্দিরে ভার্চুয়ালি যোগ দেন । তিনি দেশের হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, ‘আপনারাও দেশের নাগরিক । আপনাদেরও সমান অধিকার আছে । সেই অধিকারে আপনারা নিজেদের ধর্ম অনুসরণ করবেন এবং সমান অধিকারের সাথে উৎসব উদযাপন করবেন । আমরা এটাই চাই । এটাই বাংলাদেশের বাস্তবিক নীতি ও আদর্শ । আপনারা কখনও নিজেদের সংখ্যালঘু ভাববেন না ।’
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে । শুধু আমাদের দেশই নয় প্রতিবেশী দেশগুলোকেও এনিয়ে সতর্ক থাকতে হবে ।’ পাশাপাশি তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য হিন্দুরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন । অন্যান্য ধর্মের মানুষের মতই তাঁদেরও সমান অধিকার রয়েছে । তাই এদেশের হিন্দুরা কখনও নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করবেন না ।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটির আশপাশ । তার মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১০ শতাংশ ।।