প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ অক্টোবর : ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুৎতের তার দশদিন ধরে পড়েছিল চাষের জমিতে। সেই তারে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে শুক্রবার মারা গেলেন এক প্রান্তিক চাষি।মৃতর নাম সুকান্ত বাগ (৫৮)।মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার নবস্তা ১ পঞ্চায়েতের বেগুট গ্রামে ।চাষির এমন অকাল মৃত্যুর জন্য বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিকে দায়ি করে এদিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসী।বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা ১১ হাজার ভোল্টেজ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে সন্ধ্যার মুখে চাষির মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ময়নাতদন্তের জন্য এদিনই চাষির মৃতদেহ পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ চাষির মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,চাষি সুকান্ত বাগ এদিন সকালে চাষের জমিতে যান ।তখনই তিনি মাঠে ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুৎতের তারে বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হন । মৃতর ছেলে উত্তম বাগ জানিয়েছেন ,“দশ দিন আগে ১১ হাজার ভোল্টেজ লাইনের বিদ্যুৎতের তার গ্রামের চাষ জমি এলাকায় ছিঁড়ে পড়ে ।সেই ঘটনার কথা গ্রামবাসীরা বহুবার বিদ্যুৎ দফতরে জানায়। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর কোন হেলদোল দেখায়নি । উত্তম বাগ বলেন ,এদিন সকালে তাঁর বাবা ধান জমিতে কীটনাশক ছড়াতে যান । ছিঁড়ে পড়ে থাকা ওই বিদ্যুৎতের তার তখন কোনভাবে তাঁর বাবার শরীর ঠেকে যাওয়ায় তিনি বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হন। উত্তম বাগ দাবি করেন বিদ্যুৎ পৃষ্ঠ হয়ে জমিতেই মারা গিয়ে পড়ে থাকেন তাঁর বাবা ।সেই কথা কেউ জানতেও পারেন নি । অনেকটা দুপুর পর্যন্ত সুকান্তবাবু বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাঁর খোঁজ শুরু করেন ।তখন জমিতে গিয়ে তাঁরা দেখেন সেখানেই তাঁর বাবা মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। এই ঘটনার কথা তিনি গ্রামবাসীদের জানালে গ্রামবাসীরা ততক্ষণাত বিদ্যুৎ দফতরে খবর দেয় । বিদ্যুৎ দফতরকে খবর দেবার পর প্রায় তিন ঘন্টা বাদ বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছায় । তারা ১১ হাজার ভোল্টেজ লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সন্ধ্যার মুখে সুকান্ত বাবুর মৃতদেহ জমি থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় বলে ছেলে উত্তম বাগ জানিয়েছেন ।
এলাকার অপর চাষি ধীরেন বাস্কে ও অনুজ হাজরা বলেন , “বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির জন্যই তাঁদের এলাকার এক চাষিকে অকালে প্রাণ খোয়াতে হল । তার ছিঁড়ে যাবার পর বিদ্যুৎ দফতর যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিত তাহলে সুকান্ত বাগকে এইভাবে প্রাণ খোয়াতে হত না ।’
এদিনের ঘটনার পর নবস্তার বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে যোগাযোগ করা হলে কেউ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান নি । তবে এলাকার বিধায়ক নিশীথ মালিক এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন,“ বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতিতেই ওই চাষির মৃত্যু হয়েছে । বিদ্যুৎ দফতরের অফিসাররা তাঁর কাছে এই গাফিলতির কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন । একই সাথে বিদ্যুৎ দফতর ওই চাষি পরিবাকে সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও তাঁকে দিয়েছে ।ব্লক প্রশাসনও চাষি পরিবারকে সরকারী অনুদান পাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলে নিশীথ মালিক জানিয়েছেন ।।