এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,অক্টোবর : মৃৎশিল্পি বাবার সঙ্গে দূর্গা প্রতিমা তৈরিতে হাত লাগিয়েছেন মালদা শহরের বাসিন্দা পিএইডডির ছাত্রী ব্রততী পন্ডিত । মহালয়ার পর আর হাতে গোনা দিনে পড়ে গেছে দুর্গাপূজো । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা নির্মানের কাজ সম্পূর্ণ করার তাগিদে দম ফেলার ফুরসৎ পাচ্ছেন না মৃৎশিল্পিরা । এদিকে বৃদ্ধ বাবার চাপ কমাতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ব্রততী । ব্রততী জানান,তিনি মূলত প্রতিমার রঙের কাজ ও সাজসজ্জার যাবতীয় খুঁটিনাটি কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ।
মালদা শহরের হাটখোলা ঘোষপাড়ায় বাড়ি ব্রততী পন্ডিতের । পারিবারিক পেশা মৃৎশিল্প । ব্রততীর বাবা সুকুমার পন্ডিত মালদা শহরের একজন নামকরা মৃৎশিল্পী । এছাড়া জ্যাঠা-কাকা এমনকি ব্রততীর দাদারাও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত । তাঁদের সকলেরই মৃৎশিল্পি হিসাবে এলাকায় যথেষ্ট নামডাক আছে । ব্রততী জানান,ছোট থেকেই পরিবারের সকলকে মূর্তি তৈরি করতে দেখে তাঁরও প্রতিমা নির্মানে ঝোঁক চেপে যায় । পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি প্রতিমা নির্মানের কাজে বড়দের সাহায্য করতেন । তারপর বিগত ৭ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে পড়েন ।
শুধু প্রতিমা নির্মানে দক্ষতাই নয়, একজন মেধাবী ছাত্রী হিসাবে এলাকায় নামডাক আছে ব্রততী পন্ডিতের । জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে স্টার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হন ব্রততী । এরপর ২০১৭ সালে ইনভারসিটি অফ গৌড়বঙ্গ থেকে এডুকেশন অনার্স নিয়ে পাস করেন । পরবর্তীতে ২০১৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এডুকেশনে পিজি কোর্স সম্পূর্ণ করেন । এখানেই শেষ নয় । তারপর ২০২০ সালে এডুকেশন নিয়ে নিট পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন ব্রততী । একই বছর ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশনের অন্তর্গত এডুকেশন বিষয়ে উত্তীর্ণ হন । ২০২১ সালে বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন । পাশাপাশি তিনি কম্পিউটার ডিপ্লোমায় টেকনোলজি বিষয়ক বিভাগে রাজ্যের মধ্যে ভালো ফলাফল করেন । বর্তমানে এডুকেশন ডাটার উপর পিএইচডি করছেন ব্রততী পন্ডিত ।ব্রততী বলেন, ‘পিএইচডি করার পর অধ্যাপিকা হওয়ার ইচ্ছা আচ্ছে । তবে পারিবারিক পেশা থেকে আমি নিজেকে কখনই সরিয়ে নেবো না । সমান্তরালভাবে পারিবারিক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবো ।’
তিনি জানান,করোনা পরিস্থিতির কারনে বিগত দু’বছর ধরে মৃৎশিল্পিদের অবস্থা খুবই শোচনীয় । একে সেভাবে কাজ নেই,যেটুকু কাজ আছে তার যথাযথ মূল্য পাচ্ছেন না শিল্পিরা । এবারে তাঁর বাবার হাতে মাত্র ৩ টি কাজ আছে । তার মধ্যে ২ টি পারিবারিক পূজো ও একটি সার্বজনীন পূজো । বৃহস্পতিবার দেখা গেলো মালদা শহরের একটি বড় ক্লাবের দূর্গা প্রতিমার রঙ ও সাজের কাজ করছেন ব্রততী । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লাবকে প্রতিমা তুলে দিতে বাবার সঙ্গে রাতভর কাজ করবেন বলে তিনি জানান । মালদা শহরের এই মেধাবী ছাত্রীর প্রতিভা ও মানসিকতার তারিফ করেছেন এলাকাবাসী ।।