দিব্যেন্দু রায়,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০৪ অক্টোবর : দেবীর পাশে নেই কার্তিক-গনেশ । পূজোয় কাঁসর-ঘন্টা বাজানোর অনুমতি থাকলেও বর্জিত ঢাক । বোধন হলেও হয় না বিসর্জন । চার’শ বছর ধরে একই রীতি মেনে পূজিতা হয়ে আসছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার পাথুরিয়ামহলের মুখোপাধ্যায় পরিবারের দেবী জয়দুর্গা । কালনার বনেদি পূজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পূজো ঘিরে এলাকাবাসীদের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় । পূজোর চারটে দিন পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি গোটা এলাকার মানুষ মেতে ওঠেন দেবী জয়দুর্গার পূজোয় ।
কালনা শহরের পাথুরিয়ামহলের দেবী জয়দুর্গা স্থানীয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের পারিবারিক পূজো হলেও পূজোর পত্তন করেছিল জনৈক চট্টোপাধ্যায় পরিবার । প্রায় চার’শ বছর আগে কালনা শহরের ভাগীরথী নদীর তীরে বালির বাজারে তখন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের রমরমা ব্যাবসা । কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যাবসায় ভাটা পড়তে শুরু করলে তাঁরা তল্পিতল্পা গুটিয়ে কলকাতার আড়িয়াদহে চলে যান । যাবার আগে তাঁরা দেবী জয়দুর্গার নিত্যসেবা ও বাৎসরিক পূজোর দায়িত্ব পুরোহিত রামধন মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়ে যান ।
এদিকে দেবীর পূজো হস্তান্তর হলেও পূজো পদ্ধতির কোনও পরিবর্তন হয়নি । প্রতিমার মধ্যেও আনা হয়নি কোনও পরিবর্তন । একচালার দেবী জয়দূর্গা দেখতে অনেকটা পাথরের মত হলেও আদপে দেবী মৃন্ময়ী । দেবীর পাশে লক্ষ্মী ও সরস্বতী থাকলেও নেই কার্তিক ও গনেশ । কোনও কারণে প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ভেঙে গেলে নব কলেবর করা হয় । আজও প্রাচীন নিয়ম মেনে বারো বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ হয় বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য অমিত মুখোপাধ্যায়, সুমিত মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘ষষ্ঠীর দিন বোধন হলেও দশমীর দিন দেবী জয়দুর্গার বিসর্জন হয় না । তার পরিবর্তে কলাবউয়ের বিসর্জন দেওয়া হয় । এদিকে দশমীর দিন থেকে দেবীর নিত্যসেবা শুরু হয়ে যায় । পুজোর চারদিনে একসময় ছাগ বলি এবং সন্ধিক্ষণে মৎস্য ভোগের প্রথা ছিল । কিন্তু প্রায় ৭০ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায় । শুরু হয় কলা,শসা ও চালকুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা । দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয় । অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয় ।’
তবে দেবী জয়দুর্গার পূজোর সময় কাঁসর,ঘন্টা ও শাঁখ বাজানো হলেও ঢাক বাজানো নিষিদ্ধ । এই প্রসঙ্গে অমিতবাবুরা বলেন, ‘দেবীর পূজোর সময় ঢাক বাজালে পরিবারের ক্ষতি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই কোনও এক পূর্বপুরুষ ঢাক বাজানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন । তারপর থেকেই এই প্রথা চলে আসছে ।’
পূজোর আগে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সকল সদস্য আত্মীয়স্বজনরা এসে জড়ো হন । মাসাধিক কাল ধরে চলে পূজোর প্রস্তুতি পর্ব । এদিকে দূর্গোৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে । আগামী বুধবার মহালয় । তাই দেবী জয়দুর্গার পূজো ঘিরে সাজোসাজো রব কালনার পাথুরিয়ামহলের মুখোপাধ্যায় পরিবারে ।।