প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ সেপ্টেম্বর : দু’বছর অপেক্ষায় থাকার পরেও ছাগলের মূল্য অর্থ না পেয়ে জেলা শাসকের দ্বারস্থ হলেন এক পশু পালক। এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তা নয় । বাস্তবেই পূর্ব বর্ধমানের মেমারির পশু পালক বিশ্বজিৎ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন,মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নির্দেশ মতো দু‘বছর আগে ১০৫ টি ছাগল সরবরাহ করে আজও তিনি ছাগলের মূল্য অর্থ পাননি । পশু পালকের আনা এমন অভিযোগ শোরগোল ফেলে দিয়েছে জেলার প্রশাসনিক মহলে । যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামনি মুর্মুর দাবি পশু পালক যে ছাগল সরবরাহ করেছিলেন তার অধিকাংশ মরে যাওয়ায় ফাণ্ডের টাকা ফেরৎ চলে গিয়েছে।এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন কি ব্যবস্থা নেয় সেদিকেই এখন তাকিয়ে পশু পালক ।
পশু পালক বিশ্বজিৎ চৌধুরির বাড়ি মেমারি ২ ব্লকের বড়পলাশন ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মণ্ডল গ্রামে ।সরবরাহ করা ছাগলের মূল্য না পেয়ে তিনি জেলাশাসক, জেলাপরিষদ সভাধীপতি সহ প্রশাসনের নানা মহলে অভিযোগ জানিয়েছে । প্রশাসনকে তিনি জানিয়েছেন , মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামনি মুর্মুর নির্দেশ মতো ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ১০৫ টি ছাগল ব্লকের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগে সরবরাহ করেন । সেই ছাগল গুলি মেমারি ২ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতের গরিব উপভোক্তাদের বিলি করা হয় । ছাগলের মূল্য অর্থ ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা এক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে তখন মমনি মুর্মু জানিয়ে ছিলেন । কিন্তু তার পর থেকে দু’ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও ছাগলের মূল্য অর্থ আজও পান নি বলে পশু পালক বিশ্বজিৎ বাবু জানান । একই সঙ্গে তিনি অভিযোগে বলেন ,ছাগলের মূল্য অর্থ পাবার জন্য বহুবার তিনি মামনি মুর্মুর সঙ্গে কথা বলেন । ছাগলের মূল্য অর্থ পাওয়ার ব্যাপারে মামনি মুর্মু আশ্বাস দিয়ে যান । পরে আবার তিনি বলেন বিডিও অফিসে একটা সমস্যা হয়েছে কি করা যায় দেখছি । তার পর থেকে ফোন করলে মামনি মুর্মু আর তাঁর ফোন ধরতেন না। এই পরিস্থিতিতে একান্ত নিরুপায় হয়ে পড়ে পাওনা টাকা পাওয়ার জন্য তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ বিডিও এবং ব্লকের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরেও লিখিত ভাবে আবেদন জানান । সবাই বিষয়টি দেখছি বলে জানান । কিন্তু দু’বছর পেরিয়ে যাবার পরেও ছাগলের মূল্য অর্থ তিনি পান নি।তাই ছাগলের মূল্য অর্থ শিঘ্র যাতে পান তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন জেলা শাসক সহ জেলা প্রশাসনের নানা মহলে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন বলে বিশ্বজিৎ চৌধুরী জানান ।
এই বিষয়ে মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষ ইমতাজ আলি খান বলেন , ২০১৯ সালে কি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল সেই বিষয়ে তিনি পুরোপুরি ধোঁয়াশায় ছিলেন। ২০২১ সালে আগস্ট মাসে বিশ্বজিৎ চৌধুরী ছাগল সরবরাহ বিষয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ জানায়। তবে কী কারণে বিশ্বজিৎ বাবু এখনো সরবরাহ করা ছাগলের মূল্য অর্থ পান নি সেই বিষয়ে সঠিক ভাবে কিছু বলতে পারবেন না বলে ইমতাজ আলী খান জানান ।
পশু পালক বিশ্বজিৎ চৌধুরী যে ছাগল সরবরাহ করেছিলেন তা এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামনি মুর্মু । তবে তিনি দাবি করেন, যে ছাগল বিশ্বজিৎ বাবু সরবরাহ করেছিলেন তার অধিকাংশই মরে যায় । তা নিয়ে বিডিওর কাছে অভিযোগ জমা পড়ে । সেই কারণে ফাণ্ডের টাকা ফেরৎ চলে যায় । জেলা প্রশাসনের কাছে বিশ্বজিৎ বাবু যে অভিযোগ দায়ের করেছেন তার প্রসঙ্গে মামনি মুর্মু বলেন ,কেউ কারুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেই পারে । তবে তার সত্যতা কি আছে সেটাই আসল বিষয় । জেলা পরিষদের সহ-সভাধীপতি দেবু টুডু যদিও জানিয়েছেন ,
‘অভিযোগের বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে ।’।