প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ সেপ্টেম্বর : বিধানসভা ভোটে অভাবনীয় জয়ের পরেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় চরমে উঠেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল । কর্মীসভা থেকে দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কে উদ্দেশ্য করে ’হরিদাস পাল’ বলে কটুক্তি করলেন দলের অনুব্রত অনুগামী কাটোয়ার নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় । এই ঘটনা জেলার রাজনৈতিক মহলে যথেষ্টই শোরগোল ফেলে দিয়েছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি জেলার বিজেপি নেতৃত্ব । যদিও কাটোয়ার বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বাবু এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন,’মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হওয়া কর্মী সভা দলের কর্মীসভা নয়। অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় নামে নামে কে কর্মী সভার আয়োজন করেছে তাঁকেও চেনেন না বলেও রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়ে দেন ।
কাটোয়া শহরের রবীন্দ্র পরিষদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয় । মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ঘনিষ্ট ও অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবে পরিচিত দলের জেলা সম্পাদক অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কর্মী সভায় নেতৃত্ব দেন । কর্মী সভায় তিনি বেশ কয়েকজন কর্মীকে সম্বর্ধনা দেন । অরিন্দম বাবু দাবি করেন, দলের কর্মসূচিতে যে সমস্ত তৃণমূল কর্মীদের বিধায়ক ডাকেন না সেইসব তৃণমূল কর্মীদের তিনি সম্বর্ধনা দিলেন। সম্বর্ধনা শেষে বক্তব্য রাখতে উঠে অরিন্দম বাবু জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে একের পর এক কটুক্তি করেন । তিনি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম মুখে না এনে বলেন ,২০১৫ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিধায়ক ও দলের জেলা সভাপতি হয়েছেন। পুরানো তৃণমূল কর্মীদের কোন অসম্মান করতে আর ওনাকে দেব না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান দিতে কোন ’হরিদাস পালের’ অনুমোদন লাগে না। ‘হরিদাস পালের’ অনুমতিও নেবেন না।পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।২০১৫ সালে যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগাল দিত তারাই আজ কাটোয়ায় তৃণমূলের ক্ষমতায় আছে। তারাই রাজনীতি টাকে ব্যবসায় পরিণত করেছে। এমন নেতা ও তাঁর সাগরেদদের সম্পত্তির হিসাব নেওয়া হবে । পাশাপাশি জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কে হুমকির সুরে অরিন্দম বাবু বলেন , ‘আপনি এমন কোন ’হরিদাস পাল’ নন যে আপনাকে মাথায় করে রাখতে হবে । আপনাকে ছেড়ে কথা বলব না ।’
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব মাস খানেক আগে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে বদল ঘটায় । মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে সরিয়ে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে জেলা সভাপতি করে দল । তার পর থেকে দলের একাংশ রবীন্দ্রনাথ বাবুর বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছিলেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথবাবু জেলা সভাপতি হওয়ার পরে কেতুগ্রামে এক জনসভা মঞ্চ থেকে অনুব্রত মণ্ডল কে বলতে শোনা যায়, ’দলের কাটোয়ার দায়িত্ব সামলাবে অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়’ । দলীয় সূত্রে খবর অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের যেমন অনুগামী তেমনই তিনি প্রাক্তন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথেরও ঘনিষ্ট । তবে রবীন্দ্রনাথ বাবুকে কটুক্তি করা নিয়ে প্রাক্তন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ তাঁর ঘনিষ্ট অরিন্দম বন্দ্যোপধ্যায়ের পাশে দাঁড়ান নি। স্বপনবাবু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অরিন্দমের বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন না । কর্মীসভা করতে হলে দলের জেলা সভাপতির অনুমতি নিয়েই করতে হবে ।’
বিজেপি পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ সভাপতি অনিল দত্ত এই প্রসঙ্গে বলেন,’তৃণমূলের এক নেতা তাঁদেরই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়ছেন । এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল এখন কোন পর্যায়ে পৌচেছে ।’ দলের জেলা সভাপতিকে যিনি কটুক্তি করছেন তাঁর মাথায় তৃণমূলের উপর সারির নেতাদের হাত রয়েছে বলেই মত বিজেপি নেতৃত্বের ।।