এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর(মালদা),২২সেপ্টেম্বর : সম্পর্কীয় ভাসুরের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল পরকীয়ার সম্পর্ক ! এরই মাঝে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুগল । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বামী । তার জেরে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর হাত পা ভেঙে,মাথা থেঁতলে নৃসংসভাবে খুন করে দেহ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক গৃহবধুর বিরুদ্ধে । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের ডেইলি মার্কেট এলাকায় । যদিও দেহ পাচারের আগেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ । পুলিশ রাম মুসোহর (৩৭) নামে ওই যুবকের দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী পঞ্চমী মুসোহর,ছেলে বাপী মুসোহর ও মৃতের পিসতুতো দাদা মনোজ মুসোহরকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে । বুধবার মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ ।
জানা গেছে,হরিশ্চন্দ্রপুরের ডেইলি মার্কেট এলাকায় একতলা ইঁটের বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন রাম মুসোহর । তিনি ও তাঁর ছেলে বাপি রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন । রাম মদের নেশায় আসক্ত ছিলেন । তার জেরে স্ত্রী পঞ্চমীদেবীর সঙ্গে হামেশাই ঝামেলা হত । বাপিও তাঁর বাবার নেশা করাকে মেনে নিতে পারত না । যার জেরে বাবা ও ছেলের মধ্যেও এনিয়ে অশান্তি হত । এই অশান্তির মাঝেও মোটের উপর সব ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু তারই মাঝে রাম মুসোহরের পিসতুতো দাদা মনোজ আবির্ভাব হওয়ায় ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয় ।
জানা গেছে,পেশায় রঙ মিস্ত্রির মনোজ মুসোহর কর্মসুত্রে দিল্লিতে থাকতেন । সম্প্রতি তিনি হরিশ্চন্দ্রপুরে চলে আসেন । রঙ মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন ৷ রামের বাড়িতেই থাকতে শুরু করে মনোজ । এদিকে ভালোই কাজ জুটতে থাকে তাঁর । রোজগার ভালো হওয়ায় সে পাকাপাকিভাবে হরিশ্চন্দ্রপুরেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । ইদানিং রামের গোটা পরিবারের খরচখরচা মনোজই চালাচ্ছিল বলে জানা গেছে ।
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে খবর,এদিকে স্ত্রীর সঙ্গে দাদার সম্পর্ককে সন্দেহের চোখে দেখত রাম । এনিয়ে খুব অশান্তিও চলছিল । বেড়ে যায় তাঁর মদ্যপানের মাত্রাও । ফলে তাঁর কাজকর্ম কার্যত লাটে ওঠে । এরই মধ্যে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে পঞ্চমী ও মনোজ । তাতে বাধ সাধে রাম । এই নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তীব্র অশান্তি চলছিল ।
জানা গেছে,মঙ্গলবার রাতে ভাড়ার জন্য একটি গাড়ির সন্ধান চালাচ্ছিল মনোজ । বাপি তখন বাড়িতে ছিল না ৷ মনোজ ফোন করে বাপীকেও গাড়ি ভাড়া দেখার জন্য বলে । এদিকে দিনভর অশান্তির পর রাতে সবাই চুপচাপ হয়ে যাওয়া ও হন্যে হয়ে ভাড়া গাড়ির জন্য খোঁজ করায় সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের । শেষে প্রতিবেশীদের একাংশ বাপিদের বাড়িতে ঢুকলে দেখতে পায় বাড়ির সিড়ির নিচে লুকানো রয়েছে রামের নিথর দেহ । সঙ্গে সঙ্গে তারা ঘটনার কথা থানায় জানায় । পরে পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে ।
পুলিশ দেখে ওই ব্যক্তির মুখ কার্যত থেঁতলে দেওয়া হয়েছে । হাত-পা মেরে ভেঙে ফেলা হয়েছে । দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি ওই বাড়ি থেকে শাবল,গাঁইতি,দা প্রভৃতি সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ । ওই সমস্ত সামগ্রী খুনের সময় ব্যাবহার করা হতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশে । ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা টিপেও ধরা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান পুলিশের । তবে এই খুনের ঘটনার বিষয়ে মৃতের ছেলে কিছু বলে জানত না বলে মনে করছে পুলিশ । কারন সে বাড়ির বাইরে থাকাকালীন খুন হন তাঁর বাবা । কি উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তিকে নৃসংসভাবে খুন করা হল তা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ ।।