এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ ডিসেম্বর : স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের একটি অন্যতম সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গ । ডঃ বিধানচন্দ্র রায়ের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গ সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল । ১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তার সময়কালের মধ্যে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা, কল্যাণী ও বিধাননগর (সল্টলেক) সহ নতুন শহর প্রতিষ্ঠা, হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্প, এবং খড়্গপুর আইআইটি-এর ভিত্তি স্থাপন সহ ব্যাপক শিল্প ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল, যার পরিসংখ্যান নির্দিষ্ট সংখ্যায় দেওয়া কঠিন হলেও, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, বিশেষত দুর্গাপুরকে ইস্পাত ও শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হয় এবং চিত্তরঞ্জনে রেল ইঞ্জিন তৈরি শুরু হয়, যা ভারতের শিল্পায়নে বড় ভূমিকা রাখে ।
কিন্তু জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামপন্থীদের উত্থান পশ্চিমবঙ্গের জন্য “অভিশাপ” হিসাবে পরিনত হয় । তার আমলে ‘কো-অর্ডিনেশন’ বঙ্গের এই উন্নয়নের ধারাকে কার্যত ধ্বংস করে দেয় ৷ একদিকে “অপারেশন বর্গা”য় মধ্যবিত্ত সমাজের বিলুপ্তি ঘটে । যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে কৃষি ক্ষেত্রে । পাশাপাশি অন্যদিকে “শ্রমিক আন্দোলন”-এর নামে ধ্বংস হয়ে যায় একের পর এক কলকারখানা । যার ফলশ্রুতিতে চুড়ান্ত বেকারত্ব ও রাজ্যের সাধারণ মানুষের গড় আয় ব্যাপকহারে কমে যায় ।
বামফ্রন্টের জমানায় রাজ্যের অর্থনীতির এই ক্রম বিপর্যয়ের ধারা ২০১১ সালে কথিত পরিবর্তনের পরেও অব্যাহত আছে । মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে নতুন কলকারখানা স্থাপন তো দুরের কথা,বহু শিল্পপতি তাদের উদ্যোগ অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করেছেন বলে অভিযোগ । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবিমত, মমতা ব্যানার্জির শাসনকালে এযাবৎ এরাজ্যের প্রায় ৩ হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে । বামফ্রন্ট্রের রাজত্ব থেকে শুরু করে বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বকালে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির ঠিক কি পরিমান অবনতি হয়েছে তার একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে “দ্য ম্যাট্রিক্স” । তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের অর্থনীতিতে তৃতীয় স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গ আজ ২৪ নম্বরে নেমে এসেছে । এছাড়া,পশ্চিমবঙ্গের গড় নাগরিক গড় ভারতীয়দের তুলনায় ১৬.৩% কম আয় করেন বলেও দাবি করা হয়েছে । এই রিপোর্টকে “বামপন্থী ও মমতা রাজের অপশাসনের বিশ্বাসঘাতকতার উন্মোচন” হিসাবে অবিহিত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী ।
“দ্য ম্যাট্রিক্স” জানিয়েছে,স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে, পশ্চিমবঙ্গের গতিপথের মতো খুব কম কেস স্টাডিই এত স্পষ্ট। একসময় প্রাচ্যের শিল্প ইঞ্জিন হিসেবে পরিচিত এই রাজ্যটি গত ছয় দশক ধরে ভাগ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে।
১. সূচনা বিন্দু (১৯৬০-৬১): প্রিমিয়াম যুগ ষাটের দশকের সূচনায়, পশ্চিমবঙ্গ কার্যকরভাবে একটি অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকারী রাজ্য ছিল। – আপেক্ষিক আয়: ১২৭.৫% – এর অর্থ হল গড় বাসিন্দা জাতীয় গড়ের তুলনায় ২৭.৫% বেশি আয় করতেন। – এটি ইউনিয়নের তৃতীয় ধনী রাজ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে, নিয়েছিল, যা ভারতের উৎপাদন উৎপাদনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
২. গ্রেট ডিকাপলিং (১৯৭০-১৯৮০) – ১৯৮০-৮১ সালের মধ্যে, আপেক্ষিক আয় ৯৬.৯%-এ নেমে আসে। – এটি ছিল “ডেথ ক্রস” – যে মুহূর্তটি প্রথমবারের মতো বাংলা জাতীয় গড়ের নিচে নেমে যায়। – এই সময়কালটি শিল্পায়ন বিমুক্তি, মূলধন পলায়ন এবং “শিল্প সীমা” ভেঙে যাওয়ার সাথে মিলে যায় যা রাজ্য কখনও মেরামত করেনি।
৩. বর্তমান বাস্তবতা (২০২৪) বর্তমান সময়ের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া, এবং বৈপরীত্যটি অত্যন্ত গুরুতর। আপেক্ষিক আয়: ৮৩.৭% – বর্তমান স্থান: ২৪তম আজ, পশ্চিমবঙ্গের গড় নাগরিক গড় ভারতীয়দের তুলনায় ১৬.৩% কম আয় করেন। ১৯৯১ সালের সংস্কারের পরে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারত তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করলেও, পশ্চিমবঙ্গ নিম্ন-প্রবৃদ্ধির ভারসাম্যের মধ্যে আটকা পড়েছে । তৃতীয় স্থান থেকে ২৪ নম্বরে নেমে আসা একটি অদ্ভুত পরিসংখ্যান এবং সম্ভবত ভারতের আধুনিক অর্থনৈতিক ভূগোলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত বিপরীত।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’এই চার্টটি পশ্চিমবঙ্গের পুত্র-কন্যাদের সাথে ৪৮ বছরের লুটপাট ও বামপন্থী ও তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা রাজের অপশাসনের করুণ বিশ্বাসঘাতকতাকে উন্মোচিত করে। ১৯৬০ সালে ৩ নম্বর থেকে আজ লজ্জাজনকভাবে ২৪ নম্বরে। মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের চেয়ে ১৬% কম। শিল্প পালিয়ে গেছে, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়ে গেছে, স্বপ্ন ভেঙে গেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এখন প্রকৃত ‘পরিবর্তন’ (পরিবর্তন) এর সময়। বিজেপি বাংলার গৌরব পুনরুজ্জীবিত করবে; শিল্প, চাকরি, সকলের জন্য সমৃদ্ধি।’।

