এইদিন ওয়েবডেস্ক,আগরতলা,৩১ ডিসেম্বর : ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার হল বাংলাদেশের এক কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী । ধৃতের নাম জাগির মিয়া(৩৩)) । মঙ্গলবার সকালে তাকে আগরতলা পশ্চিম থানার অধীন জয়পুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় । জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিয়ার ছেলে জাগির মিয়া জৈশ-ই-মহম্মদের (জেএমবি) আদর্শিক শাখা “ইমাম মাহমুদে কাফেলা”-এর সক্রিয় সদস্য । গত ২৮ ডিসেম্বর এসটিএফ থানার মামলায় (মামলা নম্বর: ০৬/২০২৫) তার নাম রয়েছে । ধৃতের বিরুদ্ধে বিএনএস ২০২৩, ১৪৩,১৪৮,১৪৯,১৫০, ১৫২,১১৩(৫) এবং ইউ এপিএ ১৯৬৭ ধারায় অভিযোগ রয়েছে । তবে ওই সন্ত্রাসী পলাতক ছিল । শেষ পর্যন্ত ত্রিপুরা পুলিশ, অসম পুলিশ এবং অন্যান্য ইউনিটের যৌথ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দুই রাজ্য ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের সতর্ক থাকার জন্য আবেদন জানালেন ত্রিপুরার প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নন্দন সরকার । তিনি রাজধানী আগরতলার জন্য জায়গায় এমন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি গেড়ে থাকার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,’ঘটনাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক । আমি অনেকদিন ধরেই বলছি যে বিএসএফ এর পাশাপাশি ৫০০ মিটার দূরে একটা সেকেন্ড লাইন ডিফেন্স তৈরি করতে হবে । পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যে সমস্ত ইউনিটগুলো আছে সেগুলোর যেরকম তৎপরতা দেখানোর দরকার আমার মনে হয় তারা সেই তৎপরতা তারা দেখাচ্ছে না । ত্রিপুরার জনবহুল এলাকা অথবা মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতে এই সমস্ত সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গেড়ে আছে বলে আমার সন্দেহ । কিন্তু সেখানে হয়তো পুলিশের ইউনিটগুলো সেরকম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না । মুসলিম এরিয়া বলে রাজনৈতিক স্বার্থে হয়তো সেগুলো ছেড়ে দিচ্ছে । বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় যে সমস্ত মুসলিম মহল্লা তৈরি হয়েছে এই সমস্ত জায়গায় এই জঙ্গি গুলো ঘাঁটি ঘেড়ে আছে । আমরা ত্রিপুরার মানুষ অত্যন্ত উদ্বেগের আছি ।’
তিনি বলেন,’ত্রিপুরার সঙ্গে যে ৮৪৮ বর্ডার আছে সেই বডার দিয়ে যেকোনো দিক দিয়েই ঢুকে যেতে পারে এই সমস্ত সন্ত্রাসবাদীদের দলগুলো । আমার সন্দেহ যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে এই সমস্ত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি ত্রিপুরার আগরতলা অথবা অন্যান্য জায়গাকে করিডর হিসাবে ব্যবহার করতে পারে ।’
তিনি আরো বলেন,’বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করেছিল যে সমস্ত জঙ্গিগোষ্ঠী গুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় তারা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, তাদের গোষ্ঠীর ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সদস্যদের তারা সক্রিয় করে তুলছে । এটা ভারতের জন্য বিরাট উদ্বেগজনক । আর আমাদের দেশের যেরকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই সমস্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি সমর্থন করার জন্য মুখিয়ে আছে। কোন মুসলিমকে যদি সন্ত্রাসবাদী বলা হয় তাহলে তারা ভোট ব্যাংকের কারনে তাদের পক্ষ নিচ্ছে ।’ তিনি সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক ও এলাকার স্থানীয় ক্লাবগুলিকে এই বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য এবং বহিরাগতদের দিকে করা নজরদারি রাখার জন্য আবেদন জানান ।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর,সপ্তাহ তিনেক আগে পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মীর(পিওকে) থেকে তিনজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ সন্ত্রাসী ইতিমধ্যে বাংলাদেশে চলে এসেছে । তারা “ঢাকা সেল” তৈরি করেছে ।ইসলামী স্টেট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে তারা একটা ফিদাইন বাহিনী সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে ছাত্রনেতা ওসমান হাদির হত্যাকান্ড বা বাংলাদেশের ছোটখাটো বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলি এই আইএস গোষ্ঠীর “টেস্ট রান”-এর অঙ্গ হিসেবে মনে করা হচ্ছে । ভারতীয় গোয়েন্দাদের অনুমান যে প্রথমে বাংলাদেশে এবং পরে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে তারা এই সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে । উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে তাদের পায়ের তলার মাটি মজবুত করা ।।

