এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের পিরোজপুর সদর উপজেলার ৬ নং শারিকতলা ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমরিতলা (৩নং ওয়ার্ড) এলাকায় সাহা বাড়িতে আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) ভোররাতে আগুন ধরিয়ে দেয় মুসলিমরা৷ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ায় পরিবারগুলো তাদের সহায়-সম্বল রক্ষা করার কোনো সুযোগ পায়নি। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের মারাত্মক হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য । তিনি বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের ধরন মালদা এবং মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ৷
পিরোজপুর দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা ঘরবাড়ির ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে অমিত মালব্য লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।২৭শে ডিসেম্বর, সকাল ৬টার দিকে, পিরোজপুর জেলার ডুমুরিয়া গ্রামে ইসলামিক মৌলবাদীরা হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে আক্রমণকারীরা পলাশ কান্তি সাহাকে তার বাড়িতে তালাবদ্ধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মাত্র একদিন আগে, বাংলাদেশের পিরোজপুর সদর জেলার পশ্চিম ডুমুরিতলা গ্রামে দুটি হিন্দু পরিবারের পাঁচটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।বাংলাদেশে হিন্দুদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু হিংসার এই ধরণটি মালদা এবং মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে, হিন্দুদের বাড়িগুলিকে বেছে বেছে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল এবং এক বাবা ও ছেলে, হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসকে, ইসলামী মৌলবাদীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।
তিনি লিখেছেন,পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য কিছুই করেননি, ঠিক যেমন নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা আজ সীমান্তের ওপারে চরমপন্থীদের উৎসাহিত করছে।যখন হিন্দুদের কেবল তাদের ধর্মের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয় তখন বিশ্ব চোখ ফিরিয়ে নিতে পারে না ।’
পিরোজপুর আগুন লাগানোর ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর রাতে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের আকস্মিক বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের ঘরগুলোতে। আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলোর মধ্যে পলাশ কান্তি সাহা (পিতা: হরিদাস চন্দ্র সাহা), দ্বীপক সাহা (পিতা: ভবরঞ্জন সাহা) এবং শিব সঙ্কর সাহা (পিতা: অমল চন্দ্র সাহা)–এর বাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ঘরের আসবাবপত্র, নগদ অর্থ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পোশাক-আশাকসহ জীবনের তিল তিল করে জমানো সবকিছুই পুড়ে গেছে। যেসব ছোট ছোট সংসার বহু কষ্টে গড়ে উঠেছিল, সেগুলো এখন শুধুই ছাইয়ের স্তূপ। পৈতৃক ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর ফায়ার স্টেশনের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর যুগল বিশ্বাস জানান, কিভাবে আগুন লেগেছে এ বিষয়ে এখনও তারা নিশ্চিত নয়। তদন্ত শেষে অগ্নিকাণ্ডের কারণ বলতে পারবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ভিন্ন আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; বরং আগুন লাগানো হয়েছে । স্থানীয় এক ব্যক্তি ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে জানান, সাহা বাড়ির ৩টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে এবং পাশে থাকা আরেকটি বাড়ির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খবর পেয়ে পিরোজপুর সদর থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের মনোনীত সংসদ সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন বলে জানা গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলো দ্রুত সরকারি সহায়তা, পুনর্বাসন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘটনায় চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে ।।

