এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৮ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খানের দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে মেঘালয় পুলিশ । আজ রবিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মহম্মদ নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান,এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ উদ্ধার হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা, একটি মোটরসাইকেল, ভুয়া নম্বরপ্লেট, হাদিকে বহনকারী একটি অটোরিকশা এবং ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক।
ডিএমপি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পরপরই অভিযুক্ত ফয়সাল ও আলমগীর ঢাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় আমিনবাজার হয়ে মানিকগঞ্জের কালামপুরে যায়। সেখান থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রাইভেটকারে করে তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পৌঁছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত হওয়ার আগেই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যায়।
তদন্তে আরও জানা গেছে, হালুয়াঘাটের আগে মুন ফিলিং স্টেশনে ফিলিপ ও সঞ্জয় নামের দুই ব্যক্তি তাদের গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিল। সীমান্ত পার হওয়ার পর ফিলিপ অভিযুক্তদের ভারতের মেঘালয় রাজ্যের এক ব্যক্তি ‘পুত্তি’র কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে পুত্তি ট্যাক্সিচালক সামীর মাধ্যমে তাদের মেঘালয়ের তুরা এলাকায় পৌঁছে দেয়। ডিএমপি জানিয়েছে, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে পুত্তি ও সামীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ধৃতদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং চারজন সাক্ষী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মূল আসামিকে আটক করা গেলে এই হত্যার পেছনে কারা জড়িত, তা আরও স্পষ্টভাবে জানা যাবে। তদন্তের স্বার্থে সম্ভাব্য জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে পুলিশের সন্দেহ, ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হাদির সক্রিয় ভূমিকা ও স্পষ্ট বক্তব্যের কারণে একটি নির্দিষ্ট মহল এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর প্রায় ২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল দাউদ ও তার অজ্ঞাত সহযোগীরা চলন্ত অবস্থায় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় এবং সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই ঘটনায় প্রথমে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হলেও হাদির মৃত্যুর পর আদালতের নির্দেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়।।

