এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ ডিসেম্বর : পশ্চিমবঙ্গে “সেকুলার গান” শব্দবন্ধটি চর্চায় এসেছে কলকাতার সংগীতশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীর একটি অনুষ্ঠানের পর থেকে ৷ গত শনিবার রাতে ভগবানপুর সাউথ পয়েন্ট পাবলিক স্কুলের অনুষ্ঠানে তিনি দেবী চৌধুরানী সিনেমার ‘জাগো মা’ গানটি গাইতে শুরু করলে স্কুলের অন্যতম মালিক মেহেবুব মালিক মঞ্চে উঠে কার্যত মারমুখী হয়ে তার গান থামিয়ে দেয় এবং সে শিল্পীকে সেকুলার গান গাইতে হবে বলে ফতোয়া জারি করে বলে অভিযোগ । এই ঘটনা নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় পড়ে যায় । কিন্তু লগ্নজিতা চক্রবর্তী ঘটনার জের মিটতে না মিটতেই আর এক সংগীতশিল্পীকে “সেকুলার পন্থী” গানের এক সমর্থকের খপ্পড়ে পড়তে হল বলে অভিযোগ ।
মধুবন্তী মুখার্জি নামে ওই সংগীতশিল্পীর একটি ভিডিও বার্তা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৷ ভিডিওতে ওই শিল্পীকে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে শোনা গেছে । তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন যে “এরা সংখ্যায় বাড়লে হয়ত আমাদের গান গাওয়াই বন্ধ করে দেবে,সময় থাকতে সতর্ক হন”। তবে তার অনুষ্ঠানটি কবে ছিল তা তিনি জানাননি ।
সঙ্গীত শিল্পীকে বলতে শোনা গেছে,’গত পরশু আমার অনুষ্ঠান ছিল মাজদিয়া কৃষ্ণগঞ্জ(নদীয়া জেলা), অনুষ্ঠানটি ছিল লালন উৎসব লোকসংস্কৃতি মঞ্চ, যিনি আমার সঙ্গে কন্টাক্ট করেছিলেন তিনি বলেছিলেন যে আমাকে ওখানে লোক সংগীত গাইতে হবে৷ তাই আমি এবং আমার ব্যান্ড সেইমতো তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম । এখানকার পরিবেশ বলুন, কমিটির মেম্বার বলুন, ভীষণ ভালো, ভীষণ ভালো পরিবেশ ।’
তিনি বলেন,’সেখানে আমার সিলেকশনের মধ্যে একটি গান গাই শাহা আব্দুল করিমের “তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো” । তো সেই গানটা গাইতে গিয়ে আমাকে ভীষণ রকমের সহযোগিতা করেছেন শ্রোতা বন্ধুরা, ভীষণ উপভোগ করেছেন, কিন্তু গানটির শেষের দিকে এক ভদ্রলোক হঠাৎ করে স্টেজে উঠে আসেন । জানিনা তিনি কমিটির কেউ কি না । এত সাহস হলো কি করে ? তিনি সোজা স্টেজে উঠে আসেন এবং আমার মাইক্রোফোনটা প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে উনি অডিয়েন্সকে বলেন, “আমরা এই জাতপাতার গান শুনবো না। আমরা কোন ধর্মের গান শুনবো না। আপনি অন্য গান করুন” ৷’
শিল্পী বলেন,’আমি স্টেপ নিতাম,কিন্তু নিইনি ওখানকার কমিটি মেম্বার্সদের জন্য৷ যিনি আমার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেছিলেন, সম্ভবত গৌতম বিশ্বাস, অত্যন্ত ভালো মানুষ অত্যন্ত ভদ্রলোক, তারপরেই তিনি স্টেজে আসেন ৷ এসে মাইক্রোফোনটা নিয়ে উনি অডিয়েন্সকে বলেন, “যার গান পছন্দ নয় তিনি বেরিয়ে যাবেন৷ শিল্পী তার মনের মত গান পরিবেশন করবেন, যদি কারোর আপত্তি থাকে তাহলে সোজা বেরিয়ে যান” ৷ তো তিনি এই কথাটি বলার জন্য আমি কোন স্টেপ নেইনি ।’
এরপর ওই শিল্পীকে বলতে শোনা যায়,’কিন্তু বারংবার এই যে আমরা শিল্পীরা ফেস করছি যে ধর্মের গান শুনবো না, জাত পাতের গান শুনবো না, সেকুলার গান গাইতে হবে । আমরা জানিনা সেকুলার গান কাকে বলে । আমার মনে হয় প্রত্যেক শিল্পীকে এদের মতো প্রতিবাদ করা উচিত ।’ এরপর তিনি রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন,’সময় থাকতে সতর্ক হোন । কারণ এরা এখন সংখ্যায় কম আছে । তবুও বলছি কৃষ্ণ ভজন গাওয়া যাবে না । মায়ের গান গাওয়া যাবে না । যদি এরা সংখ্যায় বাড়ে কে বলতে পারে যে একদিন আমাদের গান গাওয়াই বন্ধ করে দেবে । তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন । প্রতিবাদ করুন ।’
প্রসঙ্গত,শাহ আব্দুল করিমের গান মূলত আধ্যাত্মিকতা, প্রেম, বিরহ এবং জীবনের গভীর দর্শন নিয়ে রচিত । “তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো” গানটি রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে । শিল্পী মধুবন্তী মুখার্জির কথামত, সম্ভবত ওই নির্দিষ্ট শ্রোতার হিন্দু ধর্মীয় গান পছন্দ হয়নি । শিল্পীর ভিডিও বার্তাটি শেয়ার করে কৃষাণু সিংহ নামে একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শৈল্পিক স্বাধীনতার উপর আর একটি আক্রমণ! এই ভিডিওতে আপনি যে মহিলাকে দেখছেন তিনি একজন গায়িকা। ভিডিওতে তিনি বলছেন যে তিনি মাজদিয়া কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায় পরিবেশনা করতে গিয়েছিলেন, এবং তিনি একটি গান গাওয়ার পর, একজন ব্যক্তি মঞ্চে উঠে তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এবং বলেন যে তিনি ধর্মীয় গান শুনবেন না; তিনি ধর্মনিরপেক্ষ গান শুনতে চান। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের উপর এই বারবার আক্রমণ আমরা মেনে নিতে পারি না। যারা বারবার সঙ্গীতের জগতে ধর্মকে নিয়ে আসছেন, তাদের কোন শক্তি সমর্থন করছে ?’

