এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৫ ডিসেম্বর : ময়মনসিংহের ভালুকায় দিপু দাসের কায়দায় ফের এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুন করল বাংলাদেশের জিহাদিরা । ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত প্রায় পৌনে ১১টা নাগাদ বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামে । ওই হতভাগ্য যুবকের নাম অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট (৩০) । নিহত অমৃত মণ্ডল ওই গ্রামের অক্ষয় মণ্ডলের ছেলে।
জানা গেছে, অমৃত মণ্ডলকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় মুসলিমরা । তবে পুলিশ দাবি করছে, তিনি কথিত ‘সম্রাট বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান ছিলেন এবং চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন । যদিও পুলিশের এই দাবিকে আদপে জিহাদিদের আড়াল করার চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। পাংশা মডেল থানার ওসি শেখ মঈনুল ইসলাম দাবি করেছেন, শহীদ শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে চাঁদা দাবি করতে গেলে বাড়ির লোকজন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে অমৃতকে আটক করে এবং মারধর করে। আর তাতেই তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ওসির দাবি অনুযায়ী, অমৃত মণ্ডলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা ছিল এবং তিনি দীর্ঘদিন ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন । ঘটনার সময় স্থানীয়রা দুইটি অস্ত্রসহ সেলিম নামের একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ।
যদিও মৃত অমৃত মণ্ডলের পরিবার পুলিশের এসব দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অমৃতকে আগে থেকেই টার্গেট করা হয়েছিল। মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কথায়, ঘটনাটি নিছক গণপিটুনি নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এই ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটলো, যখন কয়েকদিন আগেই ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে, নগ্ন করে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। পরে তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ম অবমাননার কোনো প্রমাণ পায়নি। পুলিশ জানতে পারে যে,কর্মক্ষেত্রে প্রমোশন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় গুজব ছড়ানো হয়েছিল।
এদিকে পরপর হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, অভিযোগ প্রমাণের আগেই কাউকে ‘চাঁদাবাজ’, ‘ডাকাত’ বা ‘ধর্ম অবমাননাকারী’ আখ্যা দিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার সংস্কৃতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
অমৃত মণ্ডলের পরিবার অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলছেন, বিচার না হলে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসা আরও বাড়বে এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।।

