এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,২১ ডিসেম্বর : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুরের একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে ‘জাগো মা’ গান গাওয়ার অপরাধে লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে মেহবুব মল্লিক নামে স্কুলের মালিকের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে ভগবানপুর সাউথ পয়েন্ট পাবলিক স্কুলে । এনিয়ে শিল্পী ভগবানপুর থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করলে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । যদিও প্রথম দিকে এই ঘটনায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে ভগবানপুর থানার ওসি শাহেনশাহ হকের বিরুদ্ধে । জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিতুনকুমার দে জানিয়েছেন, ‘স্থানীয় থানার ওসি ও অন্যান্য আধিকারিকদের কোনও গাফিলতি আছে কিনা, তা দেখতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।’ এদিকে এই ঘটনার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে রাজ্যের “চিরনিদ্রায়” থাকা হিন্দুদের জেগে উঠার জন্য অনুরোধ করেছেন রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার সহ-সভাপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি ।
সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজক স্বার্থক ভট্টাচার্য বলেছেন,’লগ্নজিতা চক্রবর্তী ৬-৭টি গান গাওয়ার পরে দেবী চৌধুরানী সিনেমার ‘জাগো মা’ গানটি গাইছিলেন। সেই সময় ভগবানপুরের সাউথ পয়েন্ট পাবলিক স্কুলের মালিক মেহেবুব মালিক মঞ্চে উঠে শিল্পীকে মারধর করতে যান। তাঁর দাবি, সেকুলার গান হোক। এসব গান চলবে না। ভরা মঞ্চে হেনস্তা করা হয় শিল্পীকে। থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে ওকে গ্রেপ্তার করুক।’ শিল্পি লগ্নজিতা চক্রবর্তী বলেছেন,’আমার জাগো মা গানটি গাওয়ার সময় মেহবুব মালিক স্টেজে উঠে আসেন। মারমুখী হয়ে ওঠেন। বলা হয় সেকুলার গান গাইতে। ঝামেলা হওয়ার পর স্কুলের লোকেরা ওকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।’ এদিকে ধৃত মেহবুব মল্লিকের ভাই মাসুদ মালিক তার দাদাকে সমর্থন করে বলেন,’মঞ্চে লগ্নজিতা একটি ধর্মীয় গান গাইছিলেন, সেই সময় তাঁর কাছে সেকুলার গান গাওয়ার জন্য আবেদন করা হয় ।’
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তরুনজ্যোতি তিওয়ারি এক্স-এ লিখেছেন,শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে South Point Public School–এর মঞ্চে যা ঘটেছে, সেটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।এটা তৃণমূল কংগ্রেসের আমদানি করা এক অদ্ভুত ও বিপজ্জনক সংস্কৃতির ফল।একজন শিল্পী বাংলা ভাষায় গান গাইছিলেন। মায়ের গান—“জাগো মা”। আর তাতেই আপত্তি।অভিযোগ, স্কুলের অন্যতম মালিক মেহবুব মালিক বলেন—“ধর্মনিরপেক্ষ গান গাইতে হবে।” এবং অভিযোগ অনুযায়ী, মঞ্চে উঠে মারধরের চেষ্টাও হয়। শেষ পর্যন্ত গায়িকাকে থানায় অভিযোগ জানাতে হয়।
এখন পরিষ্কার করে বলা দরকার—সমস্যাটা ভাষার নয়। কখনোই ভাষার ছিল না। যারা নিজেদেরকে আজকাল মোটামুটি ভাষা বিপ্লবী এবং বাঙালিদের রক্ষাকর্তা বলছেন তারা কি কিছু বলেছে?বলবেই বা কেন—আপত্তিটা তো বাংলা ভাষাতেই জানানো হয়েছে! আবার বলছি—ভাষার জন্য এগুলো হয় না।
যারা এখনো এটা বুঝতে পারছেন না,তাদের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে আমার প্রণাম। বাংলাদেশে যারা অত্যাচার করছে আর যারা অত্যাচারিত হচ্ছে—তাদের ভাষা এক।মালদা, মুর্শিদাবাদেও ভাষা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না।এখানেও সমস্যা গান নয়, ভাষা নয়—সমস্যা গানের লিরিক্স।কারণ কী? কারণ তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে বিশেষ একটি ধর্মের তোষণের ওপর। দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে “নাম নেব মোহাম্মদের কেটে যাবে ভয় বিপদের”— এই গান গাইলে সেটা নাকি সেকুলার। তাতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু “জাগো মা” গাইলেই অসহিষ্ণুতা শুরু হয়ে যায়। আজ গান নিয়ে আপত্তি। আগামীকাল মন্দিরের ঘণ্টা নিয়ে হবে। আর বাস্তব তো এটাই—মন্দিরের ঘণ্টা, সন্ধ্যেবেলায় শঙ্খ বাজানো, পুজো করা—এসব নিয়ে আপত্তি ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু এলাকায় শুরু হয়ে গেছে। তবু অনেকে ঘুমিয়ে আছেন। চিরনিদ্রায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ—একটু জাগুন।বাস্তবটা বুঝতে শিখুন।কারণ আজ যদি গানের লিরিক্সে আপত্তি হয়,আগামীকাল আপনার অস্তিত্বেই আপত্তি হবে।নীরবতা কোনো সমাধান নয়। নীরবতা এই বিপদকে আরও বাড়ায়।।

