এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২১ ডিসেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বলগোনা এলাকার বাসিন্দা দুই হিন্দু মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল পার্শ্ববর্তী মুসলিক অধ্যুষিত শিকড়তোড় গ্রামের বাসিন্দা দুই যুবকের বিরুদ্ধে । তার মধ্যে ভাতার থানার বলগোনা বাজারের ১৮ বছরের একটি মেয়ের দীর্ঘ ২ মাস পরেও কোনো হদিশ পায়নি তার পরিবার৷ এই ঘটনায় ভাতার থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ । হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “হিন্দু সংহতি” ভাতারের দুই ঘটনাকে “লাভ জিহাদ”-এর মামলা বলে অবিহিত করেছেন ।
“হিন্দু সংহতি”-এর কর্মী রজত রায়(Rajat Roy) ভাতার থানার বলগোনা এলাকার দুই হিন্দু মেয়ে প্রায় একসাথে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ্যে এনেছেন । তিনি একটি মেয়ের মা ও অন্য মেয়ের বাবার দায়ের করা অভিযোগপত্র এবং এফআইআর কপিগুলি নিজের ফেসবুক পেজে(https://www.facebook.com/share/1H84QJrPuq/) শেয়ার করেছেন । তিনি লিখেছেন,”দুটোই বর্ধমান জেলার ভাতাড় থানার কেস। দুই হিন্দু মেয়ে লাভ জেহাদের ফাঁদে পড়েছে। একজনের বিষয়টা একজনের মাধ্যমে আমাদের মানে হিন্দু সংহতির কাছে এসেছে। ভুলিয়ে ও একপ্রকার জোর করে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছে বলে পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে। মুনমুন বৈরাগ্যের মেয়ে বিজয়া বৈরাগ্যকে মাখন শেখের ছেলে ফিরদোস শেখ নিয়ে গিয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে। অচিন্ত্য চৌধুরীর মেয়ে অংকিতা চৌধুরীকে নিয়ে গিয়েছে শেখ আসাইয়ের ছেলে শেখ সানাউল। দুটি বিষয়কেই আমরা হিন্দু সংহতি গভীরভাবে লক্ষ্য রাখছি। আমাদের পক্ষে যেটা করা সম্ভব করার চেষ্টা করছি।”
রজত রায়ের শেয়ার করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী একটি মেয়ের বাড়ি ভাতার থানার বলগোনা বাজার এলাকায় । অন্য মেয়েটি বলগোনা গ্রামের বাসিন্দা । বলগোনা বাজার এলাকার বাসিন্দা মেয়েটির মা গত ০৩/১১/২০২৫ তারিখে ভাতার থানার ওসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন যে তার স্বামী মারা গেছেন । তিনি বলেছেন,আমার মেয়ের বয়স ১৮ বছর (জন্মতারিখ- ২১/১০/২০০৭) । গত ইংরাজি- ২৩/১০/২০২৫ তারিখে, সকাল আনুমানিক ০৬ ঘটিকা নাগাদ, আমার বাড়ি থেকে ভুল বুঝিয়ে, এক প্রকার জোরপূর্বক, আমাদেরই পাশের এলাকার শিকড়তোড় গ্রামের ছেলে, যার নাম শেখ ফিরদোস হোসেন ওরফে মাখন শেখ, পিতা- বাদশা শেখ, থানা- ভাতার, জেলা-পূর্ব বর্ধমান, নিয়ে চলে যায়। আমি এবং আমার পরিবার সেই দিন থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে খোঁজখবর করতে থাকি, কিন্তু তাদের এখনও পর্যন্ত কোন সন্ধান করতে পারছি না। আপনাকে আরও অবগত করছি যে, আমার মেয়ে মিসিং হওয়ার জন্য আমি ভাতার থানায় গত ইংরেজি ২৩/১০/২০২৫ তারিখে, একটা মিসিং ডায়েরি করি, যার নাম্বার ১৫২৬, তারিখ-২৩/১০/ ২০২৫ । তিনি তার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধারের পাশাপাশি ‘দোষী ব্যক্তির যাতে আইনত কঠোর সাজা’র ব্যবস্থা করা হয় তার দাবি জানিয়েছেন । এই ঘটনায় পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার(বি এন এস) ১৩৭-২ (অপহরণ)এবং ১৪০-বি (জোরপূর্বক আটকে রাখা) ধারায় এফ আই আর(নম্বর : ৪৮২/২৫), তারিখ : ০৩/১১/২০২৫) দায়ের করেছে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,নিখোঁজ মেয়েটির বাবা ৪-৫ বছর আগে মারা গেছেন । মেয়েটি এক ভাই ও এক বোন । তারা দু’জনেই পড়াশোনা করে । দুই সন্তানকে নিয়ে বলগোনা বাজারে থাকেন তার মা ।
অন্যদিকে জানা গেছে, দ্বিতীয় মেয়েটির বাড়ি বলগোনা গ্রামে । তারা দুই বোন । সে বড় । মেয়েটি বলগোনা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী । এবারে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা । তাদের বাবা পেশায় কৃষক । গত ০৯/১২/২০২৫ তারিখে মেয়েটির বাবা ভাতার থানায় একটি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন যে গত ২৯/১১/২০২৫ তারিখে সন্ধ্যা প্রায় ৭:৩০ নাগাদ তার ১৮ বছর বয়স্কা মেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে । অনেক রাত পর্যন্ত তার মেয়ে বাড়ি না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি করেন । কিন্তু তার মেয়ের কোনো সন্ধান করতে পারেননি ।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ,’পরে খবর পাই যে পার্শ্ববর্তী শিকড়তোড় গ্রামের বাসিন্দা সেখ আসাইয়ের ছেলে সানাউল্লা আমার মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গেছে এবং কোথাও আটকে রেখেছে ।’ একইভাবে তিনি তার মেয়েকে উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তের আইনানুগ কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন । শেয়ার করা এফ আই আর-এর কপি অনুযায়ী, পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রথম ঘটনার মতই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার(বি এন এস) ১৩৭(২) এবং ১৪০(বি) ধারায় এফ আই আর(নম্বর : ৫৩৮/২৫), তারিখ : ০১/১২/২০২৫) দায়ের করেছে ।
অভিযোগপত্রে দেওয়া ফোন নম্বরের সুত্রে “এইদিন”-এর তরফ থেকে বলগোনা গ্রামের বাসিন্দা অভিযোগকারী ব্যক্তিকে ফোন করা হলে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন,’আমার মেয়ে কোথায় আছে কিছুই জানতে পারছি না ।মেয়েকে ভিন রাজ্যে নিয়ে চলে গেছে,নাকি শিকড়তোড় গ্রামে লুকিয়ে রাখা হয়েছে সেটাও বুঝতে পারছি না । মেয়েকে উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের কোনো সদর্থক ভূমিকা দেখছি না ৷’।

