এইদিন ওয়েবডেস্ক,ময়মনসিংহ,২০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস (২৮)–কে পদত্যাগে বাধ্য করে ধর্মান্ধ জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল কোম্পানির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন (৩৮) । পরে ধর্মান্ধ মুসলিম জনতা ওই হতভাগ্য হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে আধমরা করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে । নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় কারখানার ফ্লোর ম্যানেজারসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাবের দাবি, চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করার পর ফ্লোর ইনচার্জ, কোয়ালিটি ইনচার্জ মিরাজ হোসেন আকন (৪৬) ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দিপু চন্দ্র দাসকে পুলিশের কাছে না দিয়ে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয়, যার ফলেই এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাস (২৮)–কে পিটিয়ে আধমরা করা হয়। তারপর তাকে গাছের ডালের সঙ্গে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ধর্মান্ধ জনতা ।
আজ শনিবার দুপুরে ধৃতদের বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাইমুল হাসান বলেন,’ঘটনার সূত্রপাত হয় বিকেল চারটার দিকে। ফ্যাক্টরির ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। ইস্তফা নেওয়ার পর তাকে পুলিশের হাতে না তুলে উত্তেজিত জনতার কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার দায়ে আমরা কারখানার দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছি।”
গ্রেপ্তার হওয়া উগ্রপন্থীদের মধ্যে রয়েছে,ফ্লোর ম্যানেজারআলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জমিরাজ হোসেন আকন (৪৬) । এছাড়াও র্যাব ও পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও আটজন। তাদের মধ্যে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে সাতজন এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তিনজনকে । ওই ৮ জন জিহাদি হল : তারেক হোসেন (১৯), লিমন সরকার, মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিঝুম উদ্দিন (২০), আজমল হাসান সগীর (২৬), শাহিন মিয়া (১৯) এবং মো. নাজমুল।
র্যাব পরিচালক আরও বলেন,’আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি কে কাকে কী বলেছে বা কীভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের সূত্রপাত হয়েছে। কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি। ব্যক্তিগত শত্রুতা বা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন,’কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা, পরে দেহ ঝুলিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো—এটা কোনোভাবেই আইনের মধ্যে পড়ে না। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন ঘটনার কোনো বৈধতা দেয় না।’
নিহত দিপু চন্দ্র দাস তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের বাসিন্দা এবং তার বাবা রবি চন্দ্র দাস। তিনি প্রায় দুই বছর ধরে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। এই ঘটনায় নিহতের ভাই থানায় অজ্ঞাতনামা শতাধিক ইসলামি চরমপন্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। পাশাপাশি র্যাব জানিয়েছে, তারা এ ঘটনার ওপর ‘ছায়া তদন্ত’ চালিয়ে যাবে। র্যাব-১৪ এর পরিচালক নাইমুল হাসান জানান,’ধৃতদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।।

