এইদিন ওয়েবডেস্ক,ময়মনসিংহ,১৯ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাশ (৩০)কে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গাছে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার আসল সত্য সামনে এসেছে । দিপু চন্দ্র দাশ উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ী এলাকার ডুবালিয়াপাড়া সংলগ্ন পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানায় চাকরি করতেন । সম্প্রতি নিজ যোগ্যতায় তিনি সুপারভাইজার পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন । কারখানায় কর্মরত এক মুসলিম মহিলা শ্রমিক নিজ মুখে জানিয়েছেন যে দিপু চন্দ্র দাশ প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্ম বা নবী সম্পর্কে কোনো কটূক্তি করেননি। তিনি নিজ যোগ্যতায় গার্মেন্টসে কোম্পানির সুপারভাইজার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। কিন্তু একই কারখানার আরও তিনজন মুসলিম কর্মী ঘুঁষ দিয়েও সেই পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তার জেরে ওই তিন জিহাদি পরিকল্পিতভাবে দিপুর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়ায় ।ওই নারী শ্রমিকের জানান, তারা দিপুকে ডেকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে বলে যে তিনি ইসলাম ও নবীকে অবমাননা করেছেন। একথা শোনার পর উগ্র ইসলামপন্থী জনতা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে, গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে এবং তারা “নাড়ায়ে তকদির” ও “আল্লাহু আকবর” প্রভৃতি ধর্মীয় শ্লোগান দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
দিপু চন্দ্র দাশ ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা এবং তাঁর বাবা রবি চন্দ্র দাশ। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত প্রায় ৯টার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টারবাড়ী এলাকার ডুবালিয়াপাড়া সংলগ্ন পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উপলক্ষে কারখানার ভেতরে দিপুর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম ও নবী সম্পর্কে কটূক্তির গুজব ছড়ানো হয়। মুহূর্তের মধ্যেই এই গুজব কারখানা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ইসলামি উগ্রপন্থী জনতা দিপুকে নির্দয়ভাবে মারধর করে । সেই নৃশংস বর্বরোচিত অত্যাচারে অচৈতন্য হয়ে পড়েন দীপু । তারপর জীবন্ত অবস্থায় ধর্মান্ধ মুসলিম জনতা তাকে গাছে ঝুলিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে ।
হিন্দু যুবকের মৃত্যুর পরেও মুসলিম জনতার বর্বরতা বন্ধ হয়নি । তারা দিপুর দেহ স্কয়ার মাস্টারবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। ইসলামি স্লোগান দিতে দিতে মৃতদেহে আঘাত করে। পরে দেহটি ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে গিয়ে পুনরায় আগুন দেওয়া হয় । এই নারকীয় ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করে মহাসড়কের উভয় পাশে আটকে যাওয়া যানবাহনের যাত্রীরা ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে এবং বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহম্মদ ফিরোজ হোসেন জানান, নিহত ব্যক্তির দেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক । কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর নেই ।
ইসলামি ধর্মোন্মাদের হাতে খুন হওয়া দিপু চন্দ্র দাশ বিবাহত । তাঁর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী,একটি শিশু সন্তান অসুস্থ বাবা-মা ও এক নাবালক ভাই । মূলত তার উপার্জনেই সংসার চলত । নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাশ কাঁদতে কাঁদতে বলেন,’আমি অসুস্থ৷ ছেলেটা রোজকারে সংসারটা চলত । এখন আমি কি করব ?’ তিনি আরও বলেন,’আমার ছেলে শিক্ষিত । কি থেকে কি হতে পারে সেই জ্ঞান ওর ছিল । মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে মেরে দিল ।’।

