প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ ডিসেম্বর : ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের(এস আই আর) পর গতকাল খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন । সেই অনুযায়ী বাদ গেছে ৫৯ লক্ষ নাম ৷ তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাদ গেছে ২ লাখের অধিক নাম । তবে রাজ্য জুড়ে বাদের তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে । এদিকে ভোটার তালিকার খসড়া তালিকা প্রকাশ হতেই ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যু’তে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রধান বিরোধীদল বিজেপির মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেছে । মেমারির তৃণমূল নেতৃত্ব একজন বিজেপি সমর্থকের নাম প্রকাশ্যে এনে দাবি করেছে যে ওই ব্যক্তি খাতায় কলমে ভারত ও বাংলাদেশ,দু’দেশেরই নাগরিক হয়ে বসে আছেন । অন্যদিকে কালনার হাটকালনা ও পূর্বস্থলীর মেড়তাল পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধানকে বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে দাবি করে শোড়গোল ফেলে দিয়েছে বিজেপি । আর অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তৃণমূল-বিজেপির দ্বৈরথে উত্তাল হয়ে উঠেছে জেলার রাজনৈতিক মহল ।
তৃণমূলের তরফে গত ১৫ নভেম্বর মেমারি-১ ব্লকের বিডিও-এর কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন বিমল মন্ডল নামে এক ব্যক্তি । তার অভিযোগের বিষয় হল : “ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈত নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে” । অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন,”মেমারী ১ নং ব্লকের অধীন দলুইবাজার ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের নিলকুঠি গ্রামের ১৭৫ নং বুথের ননীগোপাল মন্ডল পিতা ‘গয়ালী চরন মন্ডল যাহার ভারতীয় এপিক নং RPB1722024. ক্রমিক সংখ্যা ৫৬৬, এছাড়াও বর্তমানে এনার বাংলাদেশে গোপালগঞ্জ জেলার টুংগীপাড়া থানার গোপালপুর ইনিয়নের গোপালপুর ৬ নং ওয়ার্ড অংশের ভোটার লিস্টে ৫১৩ নং সিরিয়ালে ননীগোপাল মন্ডল পিতা ‘গয়ালী চন্দ্র মন্ডল ভোটার নং ৩৫১০৬৩৭২৯০৮৪ ভোটার আই ডি নং ৫৫০৩৭৭৬৫৫০ এখনো আছে । যাহার প্রতিলিপি সঙ্গে দিলাম। ননীগোপাল মন্ডল বাংলাদেশের গোপালপুর গ্রামে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন যাহা বাংলাদেশী ভোটার তালিকায় উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় ভোটার তালিকায় ২০০২ সালের ননীগোপাল মন্ডলের নাম নেই।”
এনিয়ে তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন । তিনি অভিযোগপত্রে এরপর লিখেছেন,”ননিগোপাল মন্ডল পিতা গয়ালী চরন মন্ডল দুই দেশের নাগরিকের সুবিধা কেন নেবে ? এনার তিন পুত্র বর্তমানে সরকারী চাকুরী করিতেছে। এই ব্যাক্তি বাংলাদেশে সরকারী স্কুলে শিক্ষকতা করলেন এনার ছেলেরা ভারতীয় সরকারি বিভাগে চাকুরিরত কি করে সম্ভব ?” বিষয়টি নিয়ে “উপযুক্ত ব্যবস্থা” গ্রহনের দাবি জানান তিনি ।
অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ সত্য বলে জানিয়েছেন নীলকুঠি এলাকার বাসিন্দা দলুইবাজার ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপ-প্রধান ধীমান বিশ্বাস । তিনি বলেন,’অবৈধ ভোটার নিয়ে মেমারিতে হইচই ফেলা বিজেপি নেতারাও ননীগোপাল মণ্ডলের দুই দেশের ভোটার হয়ে থাকার ব্যাপারে সব জানেন।কিন্তু ননীগোপাল মণ্ডল ও তাঁর পরিবার সদস্যরা যেহেতু বিজেপির ভক্ত তাই তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন’। তিনি জানান,’তৃণমূলের সবাই সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ।সেই তালিকায় যদি ননীগোপাল মণ্ডলের নাম থাকে তাহলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে’। তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও শতরুপা দাস জানান, অভিযোগের তদন্ত হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে ।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জেলার দুটি পঞ্চায়েতের প্রধানের ভারতীর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব । আর তারা হলেন কালনা মহকুমার হাট কালনা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবন্তী মণ্ডল এবং পূর্বস্থলীর মেড়তাল পঞ্চায়েতের প্রধান সন্তোষী দাস। বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসু প্রশাসনের কাছে এনিয়ে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন । তার অভিযোগ, ‘২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা এক দম্পতিকে নিজের পিতা-মাতা দেখিয়ে শ্রাবন্তী মণ্ডল প্রথম ভারতের ভোটার তালিকায় নাম তোলেন। তারপর তিনি ভোটার কার্ড,আধার কার্ড ও জাতিগত শংসাপত্র জুটিয়ে নিয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান বনে যান ।সন্তোষী দাসের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ এনে কালনার মহকুমা শাসক সহ প্রশাসনের নানা মহলে অভিযোগ জানিয়েন বিজেপি নেতৃত্ব ।
যদিও বিজেপির আনা এইসব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন শ্রাবন্তী মণ্ডল ও সন্তষী দাস। তাঁরা জানিয়েছেন,তারা যে বাংলাদেশি সেটা প্রমান করে দেখাক বিজেপি । ওই দুই তৃণমূল নেত্রীই নিজেদের নথিপত্র আসল বলে দাবি করেছেন । তবে বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে কালনার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন জানিয়েছেন, যে অভিযোগ জমা পড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
এখন দেখার বিষয় যে মালদার বহিষ্কৃত তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান লাভলি খাতুনের পাশাপাশি হাট কালনা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবন্তী মণ্ডল এবং পূর্বস্থলীর মেড়তাল পঞ্চায়েতের প্রধান সন্তোষী দাসের শেষ পরিনতি কি হয় । মেমারির ননীগোপাল মন্ডল ও তার পরিবারের নাম ভোটার তালিকায় থাকে কিনা সেটাও দেখার বিষয় । অবশ্য, বাকি তিনজন বাংলাদেশি প্রমানিত হলে সিএএ-এর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন জানানোর সুযোগ পাবেন৷ কিন্তু আইন অনুযায়ী মালদার লাভলি খাতুনের অন্তত সেই সুযোগ পাওয়ার কথা নয় ।।

