ইসলামি রাষ্ট্র তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে খোদ প্রকৃতি । অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে কৃষিকাজ ও লাগাতার খরার জন্য ভূতাত্ত্বিক ধসের কারনে অসংখ্য বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে । যাতে বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি । ড্রোন ফুটেজে ধরা পড়েছে প্রকৃতির এই ধ্বংস লীলা। তুরস্কের গমের উৎস আইকনিয়াম ও কোনিয়া সমভূমিতে ৩০ মিটার প্রশস্ত এবং শত শত মিটার গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে৷ একসময় যেখানে সোনালী গমের ক্ষেতে পরিপূর্ণ থাকত এই এলাকাটি, প্রতি বছর সেখানে নতুন নতুন ধ্বস গহ্বর বা সিঙ্কহোল খুলেছে এবং কৃষিজমি ঘরবাড়ি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে তুরস্কের কেন্দ্রীয় কোনিয়া সমভূমি – যা দেশের রুটির ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত – সাম্প্রতিক মাসগুলিতে প্রায় ৭০০টি এমন বিশাল আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে ।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষিকাজের জন্য অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে এবং চলমান তীব্র খরার মধ্যে আরও বেশি গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে । এই আকস্মিক গর্তগুলি, বেশ কিছু যানবাহন গিলে ফেলার মতো প্রশস্ত । বিশাল গহ্বরগুলি কৃষকদের ক্ষেত, ঘরবাড়ি গ্রাস করে নিচ্ছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি করেছে । যার ফলে অনেককে জমিজায়গা ও ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে এবং বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ।
ভূবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,ফসলের জন্য ব্যাপক হারে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে জলস্তর কমপক্ষে দশ মিটার কমে গেছে,ফলে নিচের অংশে বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হওয়ায় উপরিভাগের মাটি ধরে রাখার মতো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই । তুরস্ক প্রতি দশকে কয়েক’শ ধস গহ্বর বা সিঙ্কহোল দ্বারা জর্জরিত, প্রতি বছর কয়েক ডজন করে নতুন সিঙ্কহোলের সৃষ্টি হচ্ছে ।নাসা নিশ্চিত করেছে যে তুরস্কের ভূ-গর্ভস্থ জলাধারগুলি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে ১,৮৫০টি এলাকায় সম্ভাব্য ধসের লক্ষণ দেখাচ্ছে । কৃষকরা রাতারাতি তাদের ক্ষেত অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
চলতি ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে আবহাওয়াবিদদের ড্রোন ক্যামেরায় রেকর্ড করা ভিডিওতে তুরস্কের কোনিয়া সমভূমি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বিশাল নতুন সিঙ্কহোল তৈরির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে । চলতি বছরের শুরুতে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে তুরস্কের ৮৮% ভূমি মরুভূমিতে পরিনত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হবে । দক্ষিণ-পূর্ব আনাতোলিয়া মাটির আর্দ্রতা হ্রাস এবং হঠাৎ খরার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফসল নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায়, তুরস্ক ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেনের সাথে একটি যৌথ গবেষণা উদ্যোগে অংশীদারিত্ব করে, ভূমি ব্যবহারকে আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে এবং বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য কোনিয়ায় সিঙ্কহোলের জন্য একটি ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অত্যধিক ব্যবহার রোধে কঠোরভাবে জল সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ অনিয়ন্ত্রিত অবক্ষয় ভূগর্ভস্থ শিলাস্তর বা কার্স্ট ভূখণ্ডকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং এই ঘটনাকে ইন্ধন জোগাচ্ছে।।

