এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,১২ ডিসেম্বর : বৃহস্পতিবার নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর গর্ভমেন্ট কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশাসনিক ও জনসভা ছিল । এই সভায় একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি । কিন্তু মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের মাঝেই যে চিত্র উঠে এসেছে তা শাসকদলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল । কারন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝে শ্রোতাদের দল বেঁধে পালিয়ে যেতে দেখা যায় । কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাদের আটকানোর বহু চেষ্টা করেন৷ কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়ে মঞ্চে নিজের চেয়ারে এসে বসে পড়েন ।
সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চ ত্যাগ করা শ্রোতাদের চলে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেসও করেন । কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়া শুনে মনে হয়েছে যে তারা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে বিশেষ আগ্রহী নন । চাপড়া থেকে আগত এক মুসলিম মহিলা বলেন,’আমরা সকাল ৯টায় এসেছি । এখন বাড়ি যাচ্ছি ।’ কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই কেন পালাচ্ছেন ? উত্তরে তিনি ‘না…বাড়ি যাচ্ছি’ বলে হেঁসে চলে যান ।
পলাশি থেকে বাসে আসা রহমান শেখ নামে এক ব্যক্তি বলেন,’আমরা একটা বড় বাসে এক বাস এসেছি। এখন বাড়ি যাচ্ছি ।’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই চলে যাওয়ার কারন হিসাবে তিনি বলেন, ‘ভোট দেবো, ওটাই তো বড় কাজ ।’ তিনি এটাও জানান যে পানীয় জল ও খাওয়াদাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থাই ছিল । বেতাই থেকে আসা এক মধ্যবয়সী ভূপতি ওঝা নামে এক ব্যক্তি বলেন,’গাড়িতে সবাই বসে থাকবে তাইই চলে যাচ্ছি ।’ তিনিও জানান যে খাওয়াদাওয়ার সমস্ত ব্যবস্থা ছিল ।
প্রসঙ্গত,২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ভোট এক অর্থে ঐতিহাসিক হতে চলেছে । কারন রাজ্য সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি,আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বেকারত্ব, নারী সুরক্ষাকে ছাপিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে ধর্মীয় বিভাজনকে । কারন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের কথিত বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ূন কবীরের “বাবরি মসজিদ”-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শাসকদলের ভোটব্যাংকের যাবতীয় হিসাবনিকাশ উলটে দিয়েছে । বদলাতে দেখা যাচ্ছে রাজ্য রাজনীতির চিত্রপট ৷ এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাষাতেই হুমায়ুন হুঙ্কার দিচ্ছেন, “মমতা ব্যানার্জিকে প্রাক্তন করেই ছাড়ব” এবং “ভাইপোর ঠাঁই হবে জেলে” প্রভৃতি । তিনি এটাও ঘোষণা করেছেন যে আগামী ২২ ডিসেম্বর তিনি নিজের দলের নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবেন এবং রাজ্যজুড়ে ১৫০-এর অধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে তার দল ।
এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর ও শুভেন্দুর কেন্দ্র নন্দীগ্রামে “ভালো প্রার্থী” দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি৷ তবে তিনি যদি ওই দুই আসনে প্রার্থী দেন তাহলে শুভেন্দুর উপকার হলেও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে মমতাকে । কারন মুসলিম ভোটের সিংহভাগই হুমায়ূনের প্রার্থীর পক্ষে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে ।
এদিকে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় “বাবরি মসজিদ”-কে কেন্দ্র করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হুমায়ুনের যে জনসমর্থন দেখা যাচ্ছে তাতে শাসকদলের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেছে । এমতবস্থায় কৃষ্ণনগরের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্যের মাঝেই শ্রোতাদের দলে বেঁধে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আরও চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের । ২০১১ সালে সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে যে “পরিবর্তন” এনেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, এবারে সেই “পরিবর্তনের পরিবর্তন” হতে চলেছে বলে মনে করছে বিজেপি ও হুমায়ূন কবির ।।

